আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “বাংলাদেশের পুরাকীর্তি“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
বাংলাদেশের পুরাকীর্তি
ভূমিকা : প্রাচীনত্বের বিবেচনায় বাংলা সারা বিশ্বে সুপরিচিত । কারণ বাংলা ও বাঙালি জাতির রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি। বিভিন্ন রাজা-বাদশার শাসন ও পৃষ্ঠপোষকতায় বাঙালি জাতির কৃষ্টি ও সংস্কৃতি দারুণভাবে উন্নতি লাভ করে। দৃষ্টিনন্দন অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন তারই সাক্ষ্য বহন করে। সেসব পুরাকীর্তি প্রত্যক্ষ করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বহু পর্যটক ছুটে এসেছেন বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের পুরাকীর্তি : প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের বর্তমান ভূখণ্ডে উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এর কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনো বিভিন্ন অঞ্চলে রয়ে গেছে। যেমন-
মহাস্থানগড় : বগুড়া শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত মহাস্থানগড়। যিশু খ্রিস্টের জন্মের পূর্বে তৃতীয় থেকে পনের শ শতকে বাংলার এ প্রাচীন নগর গড়ে ওঠে। সমতল ভূমি থেকে এ গড় প্রায় ২০/২৫ হাত উঁচু। প্রাচীন যুগের বহু ধ্বংসাবশেষ এখানে বিদ্যমান। বিভিন্ন সময় খনন করে এ গড় থেকে পাথর, মূর্তি, শিলা, ঘরবাড়ি এবং বিভিন্ন আমলের মুদ্রা পাওয়া গেছে ।
মহাস্থানগড়ের প্রাচীনত্ব : অতি প্রাচীনকালে ‘পুণ্ড্র’ নামে এক রাজ্য ছিল। এ পুণ্ড্ররাজ্যের সীমানার মধ্যে ছিল রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, রাজশাহী, বগুড়া, বালুরঘাট, কুচবিহার, মালদহ প্রভৃতি। এ রাজ্যের একেক সময় একেক রকমের নামকরণ করা হয়েছিল; কখনো হয়েছিল বরেন্দ্রভূমি, কখনো বা গৌড়রাজ্য । উত্তর বাংলার নাম ছিল পৌণ্ড্রবর্ধন। রামায়ণ-মহাভারতেও পৌণ্ড্রবর্ধনের নাম উল্লেখ আছে । শশাঙ্ক নামে এক রাজা একসময় পুন্ড্র দখল করে নিজ রাজ্যভুক্ত করেন। তিনি মালদহ জেলার গৌড়ে প্রধান রাজধানী স্থাপন করেন। এখন পৌণ্ড্রবর্ধন প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। মূলত ইতিহাসবিখ্যাত মহাস্থানগড় রাজা পরশুরামের আমলেই সমৃদ্ধিলাভ করে । এরপর ৪৪০ সালে হজরত শাহ সুলতান ইব্রাহিম বলখী মাহী সওয়ার (র) ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য এখানে আগমন করেন। পরশুরাম এবং তার ভগ্নি শীলাদেবীর ভীষণ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে রাজা পরশুরাম নিহত হন এবং তাঁর ভগ্নি শীলাদেবী করতোয়া নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। বর্তমানে মহাস্থানগড় হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ ।
পাহাড়পুর : রাজশাহী জেলার পাহাড়পুরে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন সোমপুর বিহার। এটি ছিল বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আশ্রম। কালের গর্ভে বিলীন হয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এ নিদর্শন থেকে সম্প্রতি কিছু পুরাকীর্তি আবিষ্কার হয়েছে। মাটির সীলমোহর খোদিত লেখা থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে যে, সোমপুর বিহারটি পাল রাজা ধর্মপালের আমলে তাঁর অর্থ আনুকূল্যে নির্মিত হিমালয়ের দক্ষিণে এটাই সবচেয়ে বড় বিহার। পাহাড়পুর আশ্রমটি ছিল ২২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এর চারদিকে রয়েছে ১৭৭টি আবাসিক কক্ষ, বিস্তৃত প্রবেশপথ, ছোটখাটো অনেক স্তূপ ও মন্দির। আশ্রমটির উচ্চতা ছিল ৭২ ফুট এবং এটি তিন স্তরে নির্মিত হয়েছিল। যে দেওয়াল দ্বারা আশ্রমটি বেষ্টিত ছিল সে দেওয়ালের ওপর সাজানো ছিল একসারি ৬৩টি পাথরের মূর্তি। এ মূর্তিগুলোতে ব্রাহ্মণ ধর্মের ছাপ সুস্পষ্ট ছিল। মূর্তিগুলোর উপরের দিকে টেরাকোটার চিত্র ছিল । চিত্রগুলোতে ছিল লোকশিল্পের ছাপ। পাথরের ভাস্কর্য মূর্তিগুলোকে যে শুধু লোকশিল্পের ছাপ ছিল তা-ই নয়, এগুলোতে ছিল রামায়ণ ও মহাভারতের প্রভাব এবং শ্রীকৃষ্ণের জীবনীকেন্দ্রিক। এছাড়া এখানকার অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষের মধ্যে স্নানঘাট, গন্ধেশ্বরীর মন্দির ও সত্যপীর ভিটা উল্লেখযোগ্য ।
ময়নামতি : প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধ সভ্যতার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হলো কুমিল্লার ময়নামতি । কুমিল্লা জেলা শহরের প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে ময়নামতি অবস্থিত। সেখানে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় সতের কিলোমিটারব্যাপী ময়নামতি লালমাই পাহাড়ি অঞ্চল অবস্থিত। ময়নামতির এ ব্যাপক অঞ্চলে খননকার্যের জন্য পঞ্চাশটিরও বেশি স্থান চিহ্নিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো-
শালবন বিহার : শালবন বিহার খননকার্যের ফলে একটি সুবৃহৎ বৌদ্ধমঠ ও অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্য পাওয়া গেছে ।
আনন্দ বিহার : আনন্দ বিহারে ময়নামতির আকর্ষণীয় নিদর্শনাদি উদ্ঘাটিত হয়েছে ।
ভোজ বিহার : শালবন বিহার ও আনন্দ বিহারের পর ভোজ বিহার ময়নামতির তৃতীয় বৃহত্তম মঠ ।
ময়নামতি প্রাসাদ টিলা : ময়নামতি প্রাসাদ টিলাটি শৈলরাজির উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। এটি ময়নামতির সর্বোচ্চ ঢিবি।
রূপবান মুরা : রূপবান মুরায় খননকার্যের ফলে ক্রুশাকৃতির একটি উপাসনালয় আবিষ্কৃত হয়েছে ।
সোনারগাঁও : ইতিহাসখ্যাত সোনারগাঁও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা । ঢাকা থেকে ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এর অবস্থান । মধ্যযুগে দীর্ঘ সময় ধরে সোনারগাঁও ছিল দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গের প্রশাসনিক কেন্দ্র। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। সুলতানি ও মুঘল আমলের অনেকগুলো নিদর্শন সেখানে পাওয়া যায়। যেমন— ধর্মীয় ইমারত, মুঘল আমলের কয়েকটি সেতু আর ইংরেজ আমলের কিছু আবাসিক ভবন। এছাড়া বিভিন্ন দিঘি, মসজিদ, দরগাহ, মঠ, সরদার বাড়ি, পানাম নগরের আবাসিক ভবনসমূহের ধ্বংসাবশেষ, গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের সমাধি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ।
লালবাগ দূর্গ : মুঘল আমলে শাহজাদা আযম শাহ এবং সুবেদার শায়েস্তা খানের সময় নির্মিত হয় লালবাগ দুর্গ । এটি বাংলাদেশের একটি প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে আছে সুচারু কারুকার্যখচিত প্রাচীর ফটক; এছাড়া লালবাগ দুর্গে রয়েছে দরবার হলো, মসজিদ, মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খানের কন্যার পরী- বিবির সমাধিসৌধ ও পুকুর। পরী বিবির সমাধিসৌধটি মুঘল স্থাপত্যকলার একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন। সমাধিসৌধের মাঝখানে অবস্থিত কবরটি মার্বেল পাথর দিয়ে বাঁধানো। উপরে রয়েছে লতাপাতার নকশা ।
উপসংহার : বাংলাদেশ একটি সুপ্রাচীন দেশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি, সোনারগাঁও ইত্যাদির মতো আরও অসংখ্যা পুরাকীর্তি রয়েছে। এ পুরাকীর্তিগুলো যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনই বাঙালির অতীত কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উজ্জ্বল প্রমাণ ।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।