রচনাঃ অপসংস্কৃতি ও আমাদের যুবসমাজ

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “অপসংস্কৃতি ও আমাদের যুবসমাজ“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

অপসংস্কৃতি ও আমাদের যুবসমাজ

ভূমিকা : জীবন ও সংস্কৃতি নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। মানুষের জাগতিক নৈপুণ্য ও কর্মকুশলতা, বিশ্বাস, আশা-আকাঙ্ক্ষা, কলা ও নৈতিকতা, রাজনীতি, ভাষা, মূল্যবোধ সবকিছুই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। আমাদের সংস্কৃতি হাজার বছর ধরে বাঙালি জীবনবোধের ওপর গড়ে উঠেছে। কিন্তু বিশ্বায়নের কারণে পশ্চিমা চটকদার সংস্কৃতি আমাদের এ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। আমাদের যুবসমাজ এ সংস্কৃতির প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে। পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ মোহে পড়ে তাদের জীবনচেতনা, মূল্যবোধ বিনষ্ট হতে চলেছে। তাদের ভাষা, পোশাক-আশাক, চালচলন, খাদ্যাভ্যাস, প্রভৃতি বিদেশি সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। অপসংস্কৃতির মরণ ছোবল আমাদের যুবসমাজকে আদর্শচ্যুত করছে এবং তাদের অপরাধপ্রবণ করে তুলছে। এ ক্ষেত্রে সমাধানের দিক হচ্ছে, নিজ সংস্কৃতিকে ধারণ করে বিদেশি সংস্কৃতির ভালো দিকটিকে গ্রহণ করতে হবে।

অপসংস্কৃতি : শিক্ষা ও সভ্যতার অবনতি ঘটিয়ে যে সংস্কৃতি মানুষকে সুন্দর আদর্শ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তাই অপসংস্কৃতি ! এক অর্থে সংস্কৃতির বিকৃত রূপই হলো অপসংস্কৃতি । সংস্কৃতি আমাদের বিকশিত করে, মনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। অন্যদিকে অপসংস্কৃতি আমাদের চিত্তকে কলুষিত করে, জীবনকে বিকৃত করে, মূল্যবোধকে ধ্বংস করে। বিদেশি সংস্কৃতিকে আমরা একবাক্যে অপসংস্কৃতি হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের এ ধারণা সঠিক নয়। বিদেশের সবকিছুই অপসংস্কৃতি নয়। তবে বিদেশি যে সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে কলুষিত করছে, মূল্যবোধকে নষ্ট করে দিচ্ছে তাকে আমরা অবশ্যই অপসংস্কৃতি বলব। তাই বিদেশি কোনোকিছু অবাধে গ্রহণ করার পূর্বে আমাদের দেখতে হবে সেটি আমাদের জন্য ক্ষতিকর কি না। আমাদের দেশ ও মাটি আমাদের সংস্কৃতির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। যে সংস্কৃতি আমাদের এই দেশ ও মাটিকে ভালোবাসতে সাহায্য করে না, জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারে না তা অপসংস্কৃতিরই নামান্তর। এটা সত্য যে বিদেশিদের মতো পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে তাদের নাচ-গান, অনিয়ন্ত্রিত জীবনকে অনুসরণ করে আমরা আধুনিক হওয়ার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠছি।

Read More:  রচনাঃ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও এর প্রতিকার

অপসংস্কৃতি অনুপ্রবেশের মাধ্যম : আজ থেকে এক বা দেড়শ বছর আগে আমাদের সমাজে অপসংস্কৃতির এ লাগামহীন প্রবাহ পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের চারপাশে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি সময় ও যুগ কতখানি পাল্টে গেছে। বিশ্বায়নের ফলে পৃথিবী আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। কত সহজেই আমরা অন্য দেশের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরই একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো স্যাটেলাইট ও ডিশ অ্যান্টেনা। একে এককথায় বলা যায় আকাশ সংস্কৃতি। এর রয়েছে এক বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি সমাজ এর দ্বারা প্রভাবিত। এই আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা বিশেষত আমাদের তরুণসমাজ প্রতিনিয়ত পরিচিত হচ্ছে বিদেশি সংস্কৃতির সাথে। ভালো দিক থাকলেও এর খারাপ বা ক্ষতিকর দিকটিকেই তরুণসমাজ বেশি গ্রহণ করছে। এ কারণে তারা নিজ অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। আমাদের তরুণসমাজ এই ইন্টারনেটে অধিক মাত্রায় আসক্ত। এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিদেশি সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়ে, এর প্রতি আসক্ত হয়ে আমরা নিজ সংস্কৃতিকে ভুলতে বসেছি।

অপসংস্কৃতি ও আমাদের যুবসমাজ : আজকের তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু অপসংস্কৃতি তাদের মূল্যবোধ নষ্ট করে জীবনকে অন্ধকার গহ্বরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বলতে দ্বিধা নেই যে, আমাদের দেশে যে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটছে তার মূলে রয়েছে দুর্নীতি। তাই অপসংস্কৃতি এখন দখল করে নিচ্ছে আমাদের সংস্কৃতির আসনটি। ফলে সত্য ও সুন্দরকে বিসর্জন দিয়ে তরুণসমাজ উগ্র জীবনবোধে মাতাল হয়ে উঠেছে । টেলিভিশন ও প্রেক্ষাগৃহের পর্দায় এখন যেসব ছবি দেখানো হচ্ছে তার অধিকাংশই আমাদের সমাজ ও পরিবেশের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। বিশেষত স্যাটেলাইটের বদৌলতে টেলিভিশনগুলোতে যেসব ছবি ও অনুষ্ঠান দেখানো হয় তার বেশিরভাগই অশ্লীল এবং আমাদের সামাজিক পরিবেশের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। আজকাল অনেক তরুণকেই মেয়েদের মতো হাতে চুড়ি পরতে দেখা যায়, দেখা যায় পিতলের কড়া পরতে। মেয়েদের মতো চুল রেখে তাতে রাবার ব্যান্ড বেঁধে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় অনেক ছেলেকে। আবার অনেক মেয়ে এখন ছেলেদের মতো শার্ট-প্যান্ট পরে। এর কোনোটাই আমাদের সংস্কৃতির প্রতীক নয়। ছেলে-মেয়ে উভয়েরই এমন উগ্র আচরণ আমাদের কাম্য নয়। অনেক তরুণ-তরুণী আবার নেশার জগতে পা বাড়িয়েছে। নানাবিধ মাদকদ্রব্যে তারা জীবনের শান্তি সুখকে খুঁজে নিয়েছে। এই মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে তরুণদের সকল সম্ভাবনা, তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব উগ্র জীবন থেকে তরুণসমাজকে উদ্ধার করতে না পারলে আমাদের সামাজিক পরিবেশ তলিয়ে যাবে অপসংস্কৃতির অতলে ।

Read More:  রচনাঃ নদীতীরে সূর্যাস্ত

অপসংস্কৃতি ও আমাদের সমাজ : অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজ কাঠামো ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। শহরের উচ্চবিত্তদের মধ্যে এ বিষয়টি বেশি লক্ষ করা যায়। পশ্চিমা সমাজের বিবাহহীন অবাধ মেলামেশা ও পারিবারিক বন্ধনহীন অবাধ জীবনের ধারণা আমাদের পুরনো পারিবারিক ঐতিহ্যকে ভেঙে দিচ্ছে। সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও এখন আমাদের সমাজে প্রায় অচল । বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এখনকার তরুণদের মধ্যে প্রায় দেখাই যায় না। তরুণরা এখন অনেক বেশি স্বাধীনতা চায় এই অতিরিক্ত স্বাধীনচেতা মনোভাবের কারণেই তারা আজ পথভ্রষ্ট। এছাড়া বিদেশি সংস্কৃতির ব্যাপক আমদানির ফলে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আজ অবহেলিত ।

অপসংস্কৃতি ও সাহিত্য : সাহিত্যজগতেও অপসংস্কৃতি ডালপালা ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু কুরুচিপূর্ণ রচনা আমাদের বাজার ছেয়ে ফেলেছে। তরুণসমাজকে উদ্দেশ্য করেই এসব কুরুচিপূর্ণ বই রচনা করা হয়। কেবল এ ধরনের অশ্লীল রচনাই নয়, এর চেয়েও প্রকাশিত । ভয়ানক, ক্ষতিকর জিনিস সাহিত্যের নামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

অপসংস্কৃতি রোধের উপায় : আমাদের দেশের তরুণসমাজকে বিকশিত করতে হলে তাদের বিকাশের সুষ্ঠু সুযোগ দিতে হবে। কারণ তরুণরা নিজে নিজে বিকশিত হতে গেলেই পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। তাদের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন অনুকূল সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিবেশ। অপসংস্কৃতির অবাধ প্রবেশকে নিষিদ্ধ করতে হবে সর্বাগ্রে। বিদেশি সংস্কৃতির সাথে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ার আগে বিবেচনা করতে হবে আমাদের সমাজ, পরিবেশ ও জীবন গড়ার ক্ষেত্রে তা উপযোগী কি না। যদি উপযোগী না হয় তবে তার প্রচলন রোধ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে এই তরুণরাই সৎ, সক্রিয় ও আদর্শবান। সামাজিক প্রয়োজন সঠিক ও সুস্পষ্ট পথনির্দেশ । অনেক অনিয়মের বিরুদ্ধে এরাই সোচ্চার। কেবল অপসংস্কৃতির মোহে আজ তাদের জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। তাই এদের আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আছে। জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিপন্থী যেকোনো ধরনের অপসংস্কৃতিকে কঠোরভাবে দমন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। করতে হবে। প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করতে হবে। অপসংস্কৃতির ছোবল থেকে তরুণসমাজকে রক্ষা করতে হলে এর বিরুদ্ধে প্রবল

Read More:  রচনাঃ শরৎকাল

উপসংহার : তরুণরাই আমাদের দেশ ও জাতির প্রাণ। তাই তাদের বিপথগামিতা রোধ করা অপরিহার্য একটি বিষয়। তাদেরকে জাতীয় জীবন ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। অপসংস্কৃতি যেন আমাদের সমাজকে বিনষ্ট করতে না পারে সে জন্য অভিভাবকদের পাশাপাশি সকল শ্রেণির মানুষকে সচেতন হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে বাঙালি সংস্কৃতিতেই সংস্কৃতিকে অনুসরণ করব। আমাদের প্রকৃত পরিচয় নিহিত। তাই জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য আমরা অপসংস্কৃতিকে বর্জন করে নিজস্ব

সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।

Fahim Raihan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *