বর্তমান ডিজিটাল যুগে, প্রায়ই আমরা “ইনফ্লুয়েন্সার” বা “প্রভাবক” শব্দটা শুনি। কিন্তু এই প্রভাবক আসলে কে? কী তার কাজ? আর কেনই বা এই পেশা এত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে? চলুন, আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে এই ব্লগ পোস্টটি আপনার জন্য খুবই দরকারি।
ইনফ্লুয়েন্সার: নতুন যুগের সেলিব্রিটি – বিস্তারিত জেনেনিন!
সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় ইনফ্লুয়েন্সার বা প্রভাবক একটি অতি পরিচিত নাম। আপনি হয়তো ভাবছেন, এরা কারা? এদের কাজই বা কী? খুব সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ইনফ্লুয়েন্সাররা হলেন সেই ব্যক্তি, যারা তাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অন্যদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন। তারা তাদের অনুসারীদের মধ্যে কোনো পণ্য, পরিষেবা বা ধারণার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে পারেন।
প্রভাবক কাকে বলে? (প্রভাবক মানে কি?)
প্রভাবক হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি তার কথা, কাজ বা সৃষ্টি দিয়ে অন্যদের প্রভাবিত করতে পারেন। এখন প্রশ্ন হল, এই “অন্যেরা” কারা? এরা হলেন সেই ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, যারা ঐ প্রভাবকের অনুসারী বা ফলোয়ার। একজন প্রভাবক একটি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে (যেমন – ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি) তার অনুসারীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেন এবং তাদের মতামতকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন।
প্রভাবকের সংজ্ঞা
প্রভাবক (Influencer) হলেন একজন ব্যক্তি যিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে একটি উল্লেখযোগ্য অনুসরণকারী তৈরি করেছেন এবং তাদের অনুসারীদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন।
প্রভাবকের প্রকারভেদ
প্রভাবকের প্রকারভেদ আলোচনা করার আগে, আসুন জেনে নেই, কীসের ভিত্তিতে এদের আলাদা করা হয়। মূলত, ফলোয়ার সংখ্যা, বিষয়বস্তুর ধরন এবং প্রভাবের পরিধির ওপর ভিত্তি করে প্রভাবকদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়:
- ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সার (Nano-Influencers): এদের ফলোয়ার সংখ্যা ১,০০০ থেকে ১০,০০০ এর মধ্যে থাকে। এরা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট এলাকার বা niche-এর মধ্যে কাজ করেন এবং এদের সাথে দর্শকদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ বেশি থাকে। ধরুন, আপনার এলাকার কোনো শাড়ির দোকানের নতুন কালেকশন নিয়ে কেউ রিভিউ দিল, এবং তার ফলোয়ার সংখ্যা খুব বেশি না, তবে যারা দেখছেন তারা হয়তো সেই দোকান থেকেই শাড়িটা কিনলেন।
- মাইক্রো-ইনফ্লুয়েন্সার (Micro-Influencers): এদের ফলোয়ার সংখ্যা ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ এর মধ্যে থাকে। এদের একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকে এবং তারা সেই বিষয়ে অন্যদের পরামর্শ দেন। যেমন, ত্বকের যত্ন বা রূপচর্চা নিয়ে কেউ যদি ছোটখাটো টিপস দেয়।
- মিড-টিয়ার ইনফ্লুয়েন্সার (Mid-Tier Influencers): এই গ্রুপের ইনফ্লুয়েন্সারদের ফলোয়ার সংখ্যা ৫০,০০০ থেকে ৫,০০,০০০ এর মধ্যে থাকে। তারা প্রায়ই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করেন এবং তাদের পণ্যের প্রচার করেন। এদের গ্রহণযোগ্যতা বেশ ভালো।
- ম্যাক্রো-ইনফ্লুয়েন্সার (Macro-Influencers): এদের ফলোয়ার সংখ্যা ৫,০০,০০০ থেকে ১ মিলিয়নের মধ্যে থাকে। এরা সাধারণত সেলিব্রিটি বা পরিচিত মুখ এবং এদের প্রভাব অনেক বেশি।
- মেগা-ইনফ্লুয়েন্সার (Mega-Influencers): এদের ফলোয়ার সংখ্যা ১ মিলিয়নের বেশি। এরা প্রায়ই জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত এবং এদের মাধ্যমে যেকোনো ব্র্যান্ড খুব সহজে পরিচিতি লাভ করতে পারে।
কেন একজন প্রভাবক গুরুত্বপূর্ণ?
বর্তমান ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের যুগে একজন প্রভাবক অনেক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:
-
বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি: ইনফ্লুয়েন্সাররা তাদের অনুসারীদের মধ্যে একটি বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক তৈরি করেন। আপনি ভাবুন, আপনার পছন্দের কোনো ইউটিউবার যখন কোনো গ্যাজেটের রিভিউ দেয়, তখন সেটা আপনার কাছে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
-
লক্ষ্যযুক্ত দর্শক: ইনফ্লুয়েন্সাররা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারেন, যা বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য খুবই উপযোগী।
-
ব্র্যান্ড পরিচিতি বৃদ্ধি: একজন ইনফ্লুয়েন্সার খুব সহজে একটি ব্র্যান্ড বা পণ্যের পরিচিতি বাড়াতে পারেন।
- বিক্রয় বৃদ্ধি: ইনফ্লুয়েন্সারদের সুপারিশে অনেক সময় পণ্যের বিক্রি বাড়ে, কারণ তাদের অনুসারীরা তাদের বিশ্বাস করে।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কি? কিভাবে কাজ করে?
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো ব্র্যান্ড বা কোম্পানি তাদের পণ্য বা পরিষেবা প্রচারের জন্য প্রভাবশালীদের সাথে সহযোগিতা করে। এটি কিভাবে কাজ করে, তার একটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
- ব্র্যান্ড একটি ইনফ্লুয়েন্সারকে খুঁজে বের করে, যার অনুসারীরা তাদের লক্ষ্যযুক্ত audience-এর সাথে মিলে যায়।
- এরপর ব্র্যান্ড ইনফ্লুয়েন্সারকে তাদের পণ্য বা পরিষেবা ব্যবহারের জন্য দেয় অথবা সেই সম্পর্কে একটি স্পনসরড পোস্ট তৈরি করতে বলে।
- ইনফ্লুয়েন্সার তখন তাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সেই পণ্য বা পরিষেবা নিয়ে একটি পোস্ট বা ভিডিও তৈরি করেন।
- অনুসারীরা সেই পোস্ট দেখে পণ্যটি সম্পর্কে জানতে পারে এবং কেনার জন্য উৎসাহিত হয়।
ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার জন্য কি কি গুণাবলী থাকা দরকার?
একজন সফল ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার জন্য কিছু বিশেষ গুণাবলী থাকা দরকার। সেই সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:
-
নিজস্বতা: নিজের একটি আলাদা পরিচিতি তৈরি করতে হবে, যা অন্যদের থেকে আলাদা করবে।
-
সৃজনশীলতা: নতুন এবং আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
-
যোগাযোগ দক্ষতা: দর্শকদের সাথে ভালোভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
-
ধৈর্য: ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে সময় লাগে, তাই ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে।
-
জ্ঞান: যে বিষয়ে কনটেন্ট তৈরি করছেন, সেই বিষয়ে আপনার ভালো জ্ঞান থাকা জরুরি।
কিভাবে একজন ইনফ্লুয়েন্সার হওয়া যায়?
যদি আপনি ইনফ্লুয়েন্সার হতে চান, তাহলে কিছু জিনিস মনে রাখতে হবে। এখানে কিছু টিপস দেওয়া হলো:
- একটি নিশ (Niche) নির্বাচন করুন: প্রথমে ঠিক করুন আপনি কোন বিষয়ে কনটেন্ট তৈরি করতে চান। এটা হতে পারে ফ্যাশন, খাদ্য, ভ্রমণ, প্রযুক্তি বা অন্য কিছু।
- গুণমান সম্পন্ন কনটেন্ট তৈরি করুন: ভালো মানের ছবি ও ভিডিও তৈরি করুন এবং আকর্ষণীয় ক্যাপশন লিখুন।
- নিয়মিত পোস্ট করুন: আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে নিয়মিত কনটেন্ট পোস্ট করুন, যাতে আপনার অনুসারীরা আপনাকে মনে রাখে।
- অনুসারীদের সাথে যোগাযোগ রাখুন: তাদের প্রশ্নের উত্তর দিন এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিন।
- অন্যান্য ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে সহযোগিতা করুন: তাদের সাথে একসাথে কাজ করলে আপনার পরিচিতি বাড়বে।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। বর্তমানে, মানুষজন বিজ্ঞাপনের চেয়ে ইনফ্লুয়েন্সারদের মতামতকে বেশি বিশ্বাস করে। তাই, কোম্পানিগুলো এখন ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে।
ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার সুবিধা এবং অসুবিধা
যেকোনো পেশার মতো, ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ারও কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।
সুবিধা
-
আর্থিক স্বাধীনতা: সফল ইনফ্লুয়েন্সাররা স্পন্সরড পোস্ট, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এবং অন্যান্য উপায়ে ভালো আয় করতে পারেন।
-
নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ: ইনফ্লুয়েন্সাররা তাদের পছন্দের বিষয়ে কনটেন্ট তৈরি করে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন।
-
পরিচিতি এবং খ্যাতি: জনপ্রিয়তা পেলে অনেক মানুষ আপনাকে চিনতে পারবে।
- ক্রিয়েটিভ কাজ: নতুন কিছু তৈরি করার সুযোগ থাকে সবসময়।
অসুবিধা
-
অতিরিক্ত চাপ: নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি এবং আপলোড করার জন্য অনেক সময় এবং পরিশ্রম করতে হয়।
-
সমালোচনা: সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
-
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হ্রাস: নিজের জীবন নিয়ে অনেক বেশি তথ্য প্রকাশ করতে হয়।
- অস্থিরতা: এই পেশাটি খুব দ্রুত পরিবর্তনশীল, তাই সবসময় নতুন ট্রেন্ডের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়।
কিছু জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার প্ল্যাটফর্ম
ইনফ্লুয়েন্সাররা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তাদের কনটেন্ট তৈরি করে থাকেন। নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আলোচনা করা হলো:
-
ইউটিউব: ভিডিও কনটেন্টের জন্য এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। এখানে আপনি টিউটোরিয়াল, রিভিউ, ব্লগ এবং বিনোদনমূলক ভিডিও তৈরি করতে পারেন।
-
ইনস্টাগ্রাম: ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করার জন্য এটি খুব জনপ্রিয়। ফ্যাশন, ভ্রমণ এবং লাইফস্টাইল ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য এটি একটি আদর্শ প্ল্যাটফর্ম।
-
ফেসবুক: এটি সবচেয়ে বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেন এবং একটি বড় audience-এর কাছে পৌঁছাতে পারেন।
-
টিকটক: ছোট ভিডিও তৈরির জন্য এটি খুব জনপ্রিয়। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এটি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
-
টুইটার: এখানে আপনি ছোট বার্তা বা টুইট এর মাধ্যমে আপনার মতামত প্রকাশ করতে পারেন এবং অন্যদের সাথে আলোচনা করতে পারেন।
ইনফ্লুয়েন্সারদের আয়ের উৎস
ইনফ্লুয়েন্সাররা বিভিন্ন উপায়ে আয় করতে পারেন। তাদের কিছু প্রধান আয়ের উৎস নিচে দেওয়া হলো:
-
স্পন্সরড কনটেন্ট: বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাথে পার্টনারশিপ করে তাদের পণ্য বা পরিষেবা নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করা।
-
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: কোনো পণ্যের প্রচার করে এবং সেই পণ্যের বিক্রি হলে কমিশন পাওয়া।
-
বিজ্ঞাপন: তাদের প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় করা।
-
নিজস্ব পণ্য বিক্রি: নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করে বা পণ্য ডিজাইন করে বিক্রি করা।
-
কনসালটেন্সি: সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা ব্র্যান্ডিং বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া।
বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের সম্ভাবনা
বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এখানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বাড়ছে, এবং তারা ইনফ্লুয়েন্সারদের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই, বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় কিছু ইনফ্লুয়েন্সার
বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার রয়েছেন, যারা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:
- সালমান মুক্তাদির (YouTube)
- রাবা খান (Instagram)
- প্রীতম হাসান (Facebook)
- তাহসিনেশন (TikTok)
- মারিয়া মিম (ফেসবুক)
ইনফ্লুয়েন্সার নির্বাচন করার সময় কি কি বিষয় মনে রাখা উচিত?
যদি আপনি আপনার ব্র্যান্ডের জন্য একজন ইনফ্লুয়েন্সার নির্বাচন করতে চান, তাহলে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:
-
নিশ (Niche): নিশ্চিত করুন যে ইনফ্লুয়েন্সার আপনার ব্র্যান্ডের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ে কনটেন্ট তৈরি করেন।
-
দর্শক (Audience): দেখুন তার অনুসারীরা আপনার লক্ষ্যযুক্ত দর্শকদের সাথে মেলে কিনা।
-
এনগেজমেন্ট (Engagement): তার পোস্টে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের সংখ্যা কেমন, তা যাচাই করুন।
-
বিশ্বাসযোগ্যতা (Authenticity): ইনফ্লুয়েন্সারের কনটেন্ট যেন বিশ্বাসযোগ্য হয় এবং দর্শকদের প্রভাবিত করতে পারে।
-
বাজেট (Budget): আপনার বাজেট অনুযায়ী ইনফ্লুয়েন্সার নির্বাচন করুন।
FAQ: প্রভাবক নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (Frequently Asked Question)
এখানে প্রভাবকদের নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো:
১. ইনফ্লুয়েন্সার এবং ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরের মধ্যে পার্থক্য কি?
ইনফ্লুয়েন্সার এবং ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো তাদের কাজের পরিধি এবং সম্পর্কের গভীরতা। একজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের সাথে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে আবদ্ধ থাকেন এবং ব্র্যান্ডটিকে প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যদিকে, একজন ইনফ্লুয়েন্সার সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু ক্যাম্পেইনের জন্য কাজ করেন এবং তাদের নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে ব্র্যান্ডের প্রচার করেন।
২. কিভাবে বুঝবেন একজন ইনফ্লুয়েন্সার আসল নাকি নকল?
একজন ইনফ্লুয়েন্সার আসল নাকি নকল, তা বোঝার জন্য কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে পারেন:
-
ফলোয়ার সংখ্যা: যদি দেখেন কারো ফলোয়ার সংখ্যা অনেক বেশি কিন্তু এনগেজমেন্ট (লাইক, কমেন্ট, শেয়ার) কম, তাহলে সন্দেহ হতে পারে।
-
এনগেজমেন্টের ধরণ: যদি কমেন্টগুলো জেনেরিক বা নকল মনে হয়, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা আছে।
-
প্রোফাইলের বয়স: নতুন প্রোফাইল, যার ফলোয়ার সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, সেটিও সন্দেহের কারণ হতে পারে।
- কনটেন্টের মান: কনটেন্টের মান ভালো না হলে এবং নিয়মিত না থাকলে সেই ইনফ্লুয়েন্সারকে যাচাই করা উচিত।
৩. ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কি ছোট ব্যবসার জন্য কার্যকর?
হ্যাঁ, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ছোট ব্যবসার জন্য খুবই কার্যকর হতে পারে। ছোট ব্যবসায়ীরা কম খরচে স্থানীয় ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কাজ করে তাদের পণ্য বা পরিষেবা প্রচার করতে পারেন। এটি তাদের ব্র্যান্ড পরিচিতি বাড়াতে এবং নতুন গ্রাহক পেতে সাহায্য করে।
৪. ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার জন্য কত সময় লাগে?
ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। এটি নির্ভর করে আপনার কনটেন্টের মান, নিয়মিততা এবং দর্শকদের সাথে যোগাযোগের ওপর। কারো কারো কয়েক মাস লাগতে পারে, আবার কারো কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো লেগে থাকা এবং নিজের কাজটা ভালোবেসে করা।
৫. ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ কেমন?
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। মানুষজন এখন বিজ্ঞাপনের চেয়ে ইনফ্লুয়েন্সারদের মতামতকে বেশি বিশ্বাস করে। তাই, কোম্পানিগুলো এখন ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে। ভার্চুয়াল ইনফ্লুয়েন্সার এবং লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ক্ষেত্র আরও উন্নত হবে বলে আশা করা যায়।
৬. একজন ইনফ্লুয়েন্সারের শিক্ষাগত যোগ্যতা কি হওয়া উচিত?
ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার জন্য কোনো বাঁধাধরা শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। তবে, ভালো যোগাযোগ দক্ষতা, ক্রিয়েটিভিটি এবং নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান থাকাটা জরুরি।
৭. একজন ইনফ্লুয়েন্সারের মাসিক আয় কেমন হতে পারে?
ইনফ্লুয়েন্সারের আয় মূলত তার জনপ্রিয়তা, ফলোয়ার সংখ্যা, এনগেজমেন্ট এবং ব্র্যান্ডের সাথে করা চুক্তির ওপর নির্ভরশীল। তবে, একজন ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সার হয়তো মাসে কয়েক হাজার টাকা আয় করতে পারেন, যেখানে একজন মেগা-ইনফ্লুয়েন্সারের আয় কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
৮. ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের ROI (Return on Investment) কিভাবে পরিমাপ করা হয়?
ROI পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন মেট্রিক ব্যবহার করা হয়, যেমন – ওয়েবসাইটে ট্র্যাফিক, সেলস বৃদ্ধি, ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস, লিড জেনারেশন ইত্যাদি। এছাড়াও, কিছু বিশেষ টুলস এবং সফটওয়্যার ব্যবহার করে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের কার্যকারিতা মাপা যায়।
শেষ কথা
আশা করি, আজকের ব্লগ পোস্ট থেকে আপনি “প্রভাবক কাকে বলে” এবং এই সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা আপনার ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। আপনি যদি একজন ইনফ্লুয়েন্সার হতে চান, তাহলে আজই আপনার যাত্রা শুরু করুন। আর যদি নিজের ব্যবসার জন্য ইনফ্লুয়েন্সার নির্বাচন করতে চান, তবে উপরে দেওয়া বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখবেন।