আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব
ভূমিকা : সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা কেউ জন্মগতভাবে, আবার কেউ বা পরবর্তীকালে শারীরিক কিংবা মানসিক অক্ষমতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। মস্তিষ্ক বা অঙ্গের কোনো ত্রুটির ফলে যদি কোনো মানুষের অক্ষমতা দেখা দেয় এবং এ ধরনের অক্ষমতার কারণে তার জীবনযাপন সমস্যায় ভারাক্রান্ত হয়, তখন সে অবস্থাকে প্রতিবন্ধিতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্বাভাবিক সুস্থ সবল মানুষের মতো এরা চলতে পারে না বলে এদের জীবনের বিকাশ ঘটে ধীরে ধীরে। স্বাভাবিক সংবেদনশীল মানুষের ভালোবাসায় এরা বেড়ে উঠতে থাকে । বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এ মানুষগুলোকে সনাতনী ভাষায় ‘প্রতিবন্ধী’ বলা হয়। প্রতিবন্ধীদের প্রতি মানুষের কর্তব্য আছে; কর্তব্য আছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের।
প্রতিবন্ধিতার কারণ : বিভিন্ন কারণে মানুষ প্রতিবন্ধী হয়। শারীরিক ও মানসিক পঙ্গুতা বা বিকলাঙ্গতাই প্রতিবন্ধিতার মূল কারণ। কোনো কোনো শিশু জন্মগতভাবেই প্রতিবন্ধিতা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। মানবশিশু তার শরীরে বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন করে বলে পূর্বপুরুষের কোনো ত্রুটি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করে। কোনো কোনো সময় শারীরিক ত্রুটি বা বুদ্ধিজনিত সমস্যা বংশের ধারা হিসেবে দেখা দিতে পারে। মানবশিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও ইন্দ্রিয়সমূহ কোনো রোগ, দুর্ঘটনা বা জৈবিক ত্রুটির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যে পরিবেশে শিশু লালিত-পালিত হয় তার প্রভাব শিশুর ওপর পড়ে। পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে শিশুর প্রতিবন্ধিতা দেখা দিতে পারে। পোলিও, বসন্ত, উদরাময়, টাইফয়েড ইত্যাদি সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েও সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে। আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনা, দুঃসংবাদ ইত্যাদি শুনেও অনেক সময় মানুষ স্নায়বিক চাপের ফলে প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে । বিভিন্ন দিক বিচারে প্রতিবন্ধীদের প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা—
১. শারীরিক প্রতিবন্ধী : হাত-পা বা দেহের কোনো অঙ্গের অক্ষমতার জন্য যাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়, তাদের শারীরিক প্রতিবন্ধী বলা হয় ।
২. দৃষ্টি প্রতিবন্ধী : কারও চোখের দৃষ্টিক্ষমতায় যদি এমন মাত্রায় ঘাটতি থাকে যে, সে জীবনে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না, তাহলে তাকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলে ।
৩. শ্রবণ প্রতিবন্ধী : কারও কানে শোনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঘাটতি থাকলে অপরের কথা শোনার ব্যাপারে যদি অসুবিধার সৃষ্টি হয়, তাহলে তাকে শ্রবণ প্রতিবন্ধী বলে ।
৪. বুদ্ধি প্রতিবন্ধী : বুদ্ধির ক্ষেত্রে যদি কারও উল্লেখযোগ্য ঘাটতি থাকে এবং এতে যদি বয়সের অনুপাতে তার কর্মসম্পাদনে বাধার সৃষ্টি হয় তখন তাকে অভিহিত করা হয় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হিসেবে।
এছাড়াও আছে, বাক্ প্রতিবন্ধী। এরা স্পষ্টভাবে কথা বলার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। কারও কারও জীবনে একাধিক ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে এবং তখন নানা দিক থেকে তার জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়ে।
প্রতিবন্ধীদের দুর্বল দিক : প্রতিবন্ধীদের জীবনের নানা সমস্যাই তাদের দুর্বল দিক। তারা জীবনযাপনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয় । প্রতিবন্ধীরা পৃথিবীর বৈচিত্র্যময়তা উপভোগ করতে পারে না। কর্ম ও কোলাহলমুখর স্বাভাবিক জীবনে অংশগ্রহণ তাদের জন্য কটকময় হয়ে ওঠে। তারা স্বাভাবিক মানুষের মতো হাঁটাচলা করতে পারে না। স্বাভাবিক মানুষের মতো দায়দায়িত্ব পালন করতে রে না। তারা সামাজিক আনন্দ-বিনোদন, আচার-অনুষ্ঠান, মানুষের বিচিত্র কর্মযজ্ঞে অংশ নিতে পারে না। যেটুকু সহায়তা জিদের কোনো হাত নেই ৷ মাজের স্বাভাবিক মানুষ তাদের জন্য করে তা কেবলই করুণার।
প্রতিবন্ধীদের সামাজিক মর্যাদা : প্রতিবন্ধীরা অন্য সব স্বাভাবিক মানুষের মতো সামাজিক মর্যাদা পায় না। সমাজ তাদের সাথে অভিশপ্ত, বিষম্যমূলক আচরণ করে । তাদের বাবা-মা বা পরিবারকে ভালো চোখে দেখে না। কুসংস্কারে বিশ্বাসীরা ঐ বাবা-মা বা পরিবারটিকে পাপের ফসল ইত্যাদি বলে তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করে থাকে । যারা জন্ম থেকে পঙ্গু, বিকলাঙ্গ সমাজ তাদের সত্যাগ না করে যত্ন নেবে, তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে— এমনটিই তারা আশা করে । কিন্তু দুঃখের বিষয়— সমাজ, রাষ্ট্র প্রতিবন্ধীদের প্রতি হৃদয়হীন আচরণ করছে। বর্তমানে প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক কার্যক্রম ও প্রচার চলছে। ফলে প্রতিবন্ধীদের প্রতি মানুষ সহানুভূতিশীল হয়ে উঠেছে। সমাজও প্রতিবন্ধীদের মূল্য ও মর্যাদা দিতে শুরু করেছে। প্রতিবন্ধীদের প্রতি সব রকম সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়ালে তারা সমাজের জন্য হয়ে উঠতে পারে কল্যাণকর কর্মী মানুষ। তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারে বিভিন্ন মাধ্যমে। মহাকাশ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস যেমন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রতিবন্ধীদের প্রত্যাশা : প্রতিবন্ধীরাও মানুষ। তারা কারও দয়া চায় না, অধিকার চায়। তারা সমস্যা বাড়াতে চায় না, সমস্যা সমাধানের সুযোগ চায় । তারা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার শিক্ষা চায় । তারা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ চায়। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো প্রতিবন্ধীদের উপযুক্ত শিক্ষাদান ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের সুব্যবস্থা করা। বর্তমানে ব্রেইল. ব্যবস্থায় শিক্ষাদানের যে কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী চলছে তা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য সহজসাধ্য হয়েছে । কিন্তু তা এখনও সহজলভ্য নয়। এটিকে সহজলভ্য করতে হবে। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, সাধ্যানুযায়ী কর্মের সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদির ব্যবস্থা করে তাদের সমাজের উন্নয়ন ও উন্নতির জন্য কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে তারা আর সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে না। তারাও সমাজে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
প্রতিবন্ধীদের প্রতিভা : মানুষের জীবন অপার সম্ভাবনাময়। শারীরিক ও মানসিক কোনো ত্রুটির জন্য সেই সম্ভাবনা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। এ কারণেই প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন দিকে বিশেষ প্রতিভা লক্ষ করা যায়। ভুবনজয়ী বহু প্রতিভাবান প্রতিবন্ধী মানুষের কথা আমরা জানি । বিখ্যাত কবি মিল্টন ছিলেন অন্ধ, বায়রন ছিলেন খঞ্জ । জন কিট, আরএল স্টিভেনসন, নিটসে ছিলেন চির রুগ্ণ। অথচ তাদের প্রতিভার অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে বিশ্বসাহিত্য। উপযুক্ত পরিবেশ, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ পেলে প্রতিবন্ধীরা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়ে ওঠে। কাজেই আমাদের একটু আদর, যত্ন, ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেলে প্রতিবন্ধীরা সফল জীবনের অধিকারী হয়ে অন্য মানুষের মতোই স্বাভাবিক জীবনের অংশীদার হয়ে উঠতে পারে, পরিণত হতে পারে দেশের জনসম্পদে।
প্রতিবন্ধী বিষয়ে জাতিসংঘের কর্মসূচি : প্রতিবন্ধী বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে নানা রকম কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। জাতিসংঘ এবং তার অঙ্গ সংগঠন ইউনিসেফ, ইউনেস্কো, আইএলও ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান বিশ্বের মানুষকে প্রতিবন্ধী সম্পর্কে সচেতন করার জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। জাতিসংঘ ১৯৮১ সালকে বিশ্ব-প্রতিবন্ধী বর্ষ ঘোষণা করে। এই ঘোষণার মূল উদ্দেশ্য প্রতিবন্ধীদের প্রতি পৃথিবীর সমাজ ও রাষ্ট্রসমূহকে দায়িত্বশীল করা। জাতিসংঘের দ্বিতীয় ঘোষণা— প্রতি বছর ৩ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে ঘোষণা। সেই ঘোষণা অনুযায়ী ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়। এই দিবস পালন করার উদ্দেশ্য পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিবন্ধীদের অবস্থা সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা, যাতে এদের সম্পর্কে তারা ইতিবাচক ধারণা লাভ করতে পারে এবং এদের সুপ্ত কর্মক্ষমতাকে উজ্জীবিত করতে পারে। সর্বোপরি সবাই যেন প্রতিবন্ধীদের প্রতি মানবিক আচরণ করে ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে— সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়।
প্রতিবন্ধী বিষয়ে বাংলাদেশের কার্যক্রম : বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন ও সেবামূলক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ প্রতিষ্ঠার শর্ত অনুযায়ী প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও পুনর্বাসনসহ সব দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করে বাংলাদেশ উক্ত সনদে স্বাক্ষর করেছে। এদেশের জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম নামে একটি সংগঠন সরকারের সহযোগিতায় জাতীয় প্রতিবন্ধী নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে । ১৯৯৫ সালের নভেম্বর মাসে এ নীতিমালা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভায় ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী নীতিমালা’ হিসেবে অনুমোদিত হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০০৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনের জন্য নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে সেই অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। ফলে প্রতিবন্ধীরা খেলাধুলাসহ শিক্ষা-সংস্কৃতিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের প্রতিভার পরিচয় দেওয়ার সুযোগ লাভ করছে। এদেশে শিক্ষা, চাকরি প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত কোটা বরাদ্দ করা হয়েছে, যাতে করে তারা তাদের যোগ্যতা অনুসারে কাজ করে সমাজে আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তি হিসেবে মর্যাদা লাভ করতে পারে।
প্রতিবন্ধিতা দূরীকরণের প্রয়োজনীয়তা : আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা কোনোভাবেই উপেক্ষা করার মতো বিষয় নয়। জাতিসংঘের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের অধিবাসীদের শতকরা দশ ভাগ প্রতিবন্ধী। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে প্রায় দেড় কোটি লোক প্রতিবন্ধী বলে অনুমান করা হয়। বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের জনসংখ্যার চেয়ে এ সংখ্যা বেশি। এই বিপর সংখ্যক জনগোষ্ঠী অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কল্যাণকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। অথচ প্রতিবন্ধিতা থেকে তাদের মুক্ত করা গেলে কিংবা তাদের কর্মোপযোগী করা গেলে এ বিপুল সংখ্যক মানুষ পরিবার, সমাজ বা দেশের জন্য কল্যাণ বার আনতে পারত । তারা ব্যক্তিজীবনে কর্মক্ষমতার পরিচয় দিতে পারলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারত এবং জাতীয় জীবনেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হতো। এসব কারণে প্রতিবন্ধিতা দূরীকরণ একান্ত জরুরি এবং সামাজিক দায়িত্ব।
প্রতিবন্ধিতা দূরীকরণের উপায় : গর্ভাবস্থায় শিশুর মা ও গর্ভস্থিত শিশু বহু সমস্যার মুখোমুখি হয়। শিশুর পুষ্টির অভাব হতে পারে। মায়ের স্বাস্থ্যের সমস্যা থাকে। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং দারিদ্র্য ও অশিক্ষা হলো প্রতিবন্ধিতার প্রথম কারণ। তা দূরীকরণ নিঃসন্দেহে সামাজিক ও রাষ্ট্রিক দায়িত্ব। আর দুর্ঘটনাজনিত প্রতিবন্ধিতা ও বিভিন্ন রোগ ইত্যাদিজনিত বিকলাঙ্গতার নিরাময় এবং পুনর্বাসনও রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাপারে সামাজিক ও রাষ্ট্রিক দায়িত্ব ও কর্তব্য মূলত দুই ধরনের। যথা- এক. প্রতিবন্ধিতার প্রধান কারণগুলো নির্মূল এবং দুই. প্রতিবন্ধীদের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা প্রতিবন্ধিতা নির্মূলের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন অশিক্ষা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং তা করতে হলে দ্রুত সামাজিক পরিবর্তন প্রয়োজন দারিদ্র্য ও অশিক্ষার ফলে অখাদ্য কুখাদ্য খাওয়ায় নানা জটিল, সংক্রামক ও দুরারোগ্য ব্যাধির আক্রমণে বৃদ্ধি পায় প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা। অশিক্ষা ও দারিদ্র্য দূর করার পাশাপাশি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও সহজলভ্যতার মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা বৃদ্ধির এ সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন ও সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে দেখা যায়। ‘তাই প্রতিবন্ধীদের যথাযথভাবে পুনর্বাসন ও তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মধ্যে রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ ও পরিবর্তনও জরুরি।
উপসংহার : এদেশের জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ প্রতিবন্ধী। শারীরিক কোনো ত্রুটি বা মানসিক ভারসাম্যহীনতার জন্য তারা স্বাভাবিক জীবনযাপনে সমস্যায় পড়ে। প্রতিবন্ধিতার কারণে মানবজীবনের সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হয়। তারা পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য বোঝাস্বরূপ। উন্নত বিশ্বে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের জন্য নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের প্রতি সচেতন ও সহানুভূতিশীল হলে, তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দান করলে তাদের প্রতিবন্ধকতার সমস্যা বহুলাংশে দূর করা যায়। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের জন্য নানা রকম কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের জন্য পরিবার, সমাজ ও দেশের সবার তৎপর হওয়া দরকার। এ ব্যাপারে সবাই সচেতন হলে এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে তারা দেশ ও জাতির জন্য স্বাভাবিক মানুষের মতোই সম্পদ হিসেবে প্রমাণ রাখবে।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।