আসসালামু আলাইকুম, বন্ধুরা! কেমন আছেন সবাই? কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আমাদের শরীরটা ঠিক কিসের তৈরি? একটা ইমারত যেমন ইট, সুরকি, সিমেন্ট দিয়ে তৈরি, তেমনি আমাদের শরীরটাও তৈরি কিছু ছোট ছোট জিনিস দিয়ে। তাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস হলো টিস্যু। আজ আমরা টিস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, একদম সহজ ভাষায়।
টিস্যু কী? (What is Tissue?)
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, টিস্যু হলো একই গঠন এবং কাজ সম্পন্নকারী কোষের সমষ্টি। অনেকটা যেন একই ধরনের অনেকগুলো ইট একসাথে গেঁথে একটা দেয়াল তৈরি হয়েছে। এই কোষগুলো একসাথে কাজ করে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করে এবং সেগুলোর কার্যাবলী সঠিকভাবে পরিচালনা করে। টিস্যুবিদ্যা (Histology) নামক জীববিজ্ঞানের একটি শাখায় টিস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
টিস্যুর প্রকারভেদ (Types of Tissues)
আমাদের শরীরে প্রধানত চার ধরনের টিস্যু দেখা যায়:
- আবরণী টিস্যু (Epithelial Tissue): এটি আমাদের শরীরের বাইরের এবং ভেতরের অঙ্গগুলোর আবরণ তৈরি করে। অনেকটা দেয়ালের প্লাস্টারের মতো, যা সবকিছুকে ঢেকে রাখে এবং রক্ষা করে।
- যোজক টিস্যু (Connective Tissue): এই টিস্যু শরীরের বিভিন্ন অংশকে একে অপরের সাথে যুক্ত করে, যেমন হাড়, লিগামেন্ট, টেন্ডন ইত্যাদি। এটা অনেকটা বিল্ডিংয়ের কলামের মতো, যা পুরো কাঠামোকে ধরে রাখে।
- পেশী টিস্যু (Muscle Tissue): এই টিস্যু আমাদের শরীরের নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। যেমন হাত-পা নাড়ানো, দৌড়ানো, হাঁটা – সবকিছুই এই টিস্যুর কারণে সম্ভব হয়।
- স্নায়ু টিস্যু (Nervous Tissue): এটি আমাদের শরীরের তথ্য আদান প্রদানে সাহায্য করে। মস্তিষ্ক থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে সংবেদী অঙ্গের মাধ্যমে তথ্য পৌঁছায় এবং ফিরিয়ে আনে।
চলুন, এবার এই টিস্যুগুলো সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আবরণী টিস্যু: সুরক্ষা এবং নিঃসরণে সেরা (Epithelial Tissue: Best in Protection and Secretion)
আবরণী টিস্যু আমাদের শরীরের বহিরাবরণ এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও গ্রন্থিগুলোর প্রাচীর তৈরি করে। এই টিস্যু আমাদের ত্বক, মুখগহ্বর, খাদ্যনালী, শ্বাসনালী, এবং অন্যান্য অঙ্গের ভেতরের স্তর তৈরি করে। আবরণী টিস্যুর মূল কাজ হলো:
- সুরক্ষা: এটি আমাদের শরীরকে বাইরের আঘাত, জীবাণু এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ থেকে রক্ষা করে।
- নিঃসরণ: কিছু আবরণী টিস্যু হরমোন, ঘাম, লালা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদার্থ নিঃসরণ করে।
- শোষণ: ক্ষুদ্রান্ত্রের আবরণী টিস্যু খাদ্য থেকে পুষ্টি উপাদান শোষণ করে নেয়।
- সংবেদী অনুভূতি: কিছু আবরণী টিস্যুতে বিশেষ সংবেদী কোষ থাকে, যা স্পর্শ, ব্যথা, তাপমাত্রা এবং অন্যান্য অনুভূতি গ্রহণ করতে পারে।
আবরণী টিস্যুর প্রকারভেদ (Types of Epithelial Tissue)
গঠন এবং কার্যাবলীর উপর ভিত্তি করে আবরণী টিস্যুকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়:
- স্কোয়ামাস আবরণী টিস্যু (Squamous Epithelium): এটি পাতলা এবং চ্যাপ্টা কোষ দিয়ে গঠিত। ফুসফুসের অ্যালভিওলাই এবং রক্তনালীর প্রাচীরে এই টিস্যু দেখা যায়। এদের প্রধান কাজ হল ব্যাপন (Diffusion) প্রক্রিয়ায় গ্যাস আদান প্রদানে সাহায্য করা।
- কিউবয়েডাল আবরণী টিস্যু (Cuboidal Epithelium): এই টিস্যুর কোষগুলো ঘনক্ষেত্রাকার। বৃক্কের নালিকায় এবং গ্রন্থিগুলোতে এই টিস্যু পাওয়া যায়। এরা মূলত নিঃসরণ এবং শোষণে ভূমিকা রাখে।
- কলামনার আবরণী টিস্যু (Columnar Epithelium): এই টিস্যুর কোষগুলো স্তম্ভাকার। এটি আমাদের পরিপাকতন্ত্রের ভেতরের স্তরে দেখা যায়। কলামনার টিস্যু খাদ্য শোষণ এবং এনজাইম নিঃসরণে সাহায্য করে।
- সিউডোস্ট্র্যাটিফাইড কলামনার আবরণী টিস্যু (Pseudostratified Columnar Epithelium): এই টিস্যু এক স্তরের হলেও কোষগুলোর নিউক্লিয়াস বিভিন্ন উচ্চতায় থাকার কারণে এদেরকে বহিরাগত মনে হয়। শ্বাসনালীতে এই টিস্যু দেখা যায়, যা মিউকাস নিঃসরণ করে এবং ক্ষতিকর উপাদান আটকে দেয়।
- ট্রানজিশনাল আবরণী টিস্যু (Transitional Epithelium): এই টিস্যু প্রস্রাবের থলির প্রাচীরে পাওয়া যায়। এটি প্রস্রাবের চাপ সহ্য করতে পারে এবং থলিকে প্রসারিত হতে সাহায্য করে।
যোজক টিস্যু: শরীরের বন্ধন (Connective Tissue: The Body’s Binding Agent)
যোজক টিস্যু শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এবং টিস্যুকে একে অপরের সাথে যুক্ত করে। এটি শরীরের কাঠামো তৈরি করে এবং বিভিন্ন অঙ্গকে সঠিক স্থানে ধরে রাখে। যোজক টিস্যুর প্রধান কাজগুলো হলো:
- সংযুক্ত করা: এটি শরীরের বিভিন্ন অংশকে একে অপরের সাথে জোড়া লাগায়।
- সমর্থন দেওয়া: হাড় এবং তরুণাস্থি শরীরের কাঠামো তৈরি করে এবং অঙ্গগুলোকে সমর্থন দেয়।
- পরিবহন: রক্ত যোজক টিস্যুর একটি অংশ, যা অক্সিজেন, পুষ্টি উপাদান এবং হরমোন পরিবহন করে।
- সুরক্ষা: কিছু যোজক টিস্যু, যেমন চর্বি, অঙ্গগুলোকে আঘাত থেকে বাঁচায় এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
যোজক টিস্যুর প্রকারভেদ (Types of Connective Tissue)
যোজক টিস্যুকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
-
তরল যোজক টিস্যু (Fluid Connective Tissue): রক্ত এবং লসিকাকে তরল যোজক টিস্যু বলা হয়। রক্ত অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, পুষ্টি উপাদান এবং বর্জ্য পদার্থ পরিবহন করে। লসিকা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- রক্তের উপাদান: রক্তরস (প্লাজমা), লোহিত রক্ত কণিকা (Red Blood Cells), শ্বেত রক্ত কণিকা (White Blood Cells), এবং প্লেটলেট (Platelets)।
-
কঙ্কাল যোজক টিস্যু (Skeletal Connective Tissue): হাড় এবং তরুণাস্থি এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। হাড় শরীরকে কাঠামো দেয় এবং অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে। তরুণাস্থি অস্থিসন্ধিগুলোতে ঘর্ষণ কমাতে সাহায্য করে এবং নাক, কান ইত্যাদি অঙ্গের আকার দেয়।
- হাড়ের গঠন: অস্টিওসাইট (Osteocytes) নামক কোষ এবং ক্যালসিয়াম ফসফেট (Calcium Phosphate) নামক খনিজ পদার্থ দিয়ে গঠিত।
- তরুণাস্থির গঠন: কনড্রোসাইট (Chondrocytes) নামক কোষ এবং কোলাজেন (Collagen) নামক প্রোটিন দিয়ে গঠিত।
-
সাধারণ যোজক টিস্যু (Connective Tissue Proper): এই টিস্যু শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং তাদের সমর্থন দেয়। যেমন:
* **অ্যারিওলার টিস্যু (Areolar Tissue):** ত্বক এবং পেশীর মধ্যে থাকে, যা অঙ্গগুলোকে কুশন দেয় এবং পুষ্টি সরবরাহ করে।
* **অ্যাডিপোস টিস্যু (Adipose Tissue):** চর্বি কোষ দিয়ে গঠিত, যা শক্তি সঞ্চয় করে এবং শরীরকে গরম রাখে।
* **ফাইব্রাস টিস্যু (Fibrous Tissue):** টেন্ডন (Tendon) এবং লিগামেন্ট (Ligament) এই টিস্যু দিয়ে তৈরি, যা পেশীকে হাড়ের সাথে এবং হাড়কে একে অপরের সাথে যুক্ত করে।
পেশী টিস্যু: নড়াচড়ার চালিকাশক্তি (Muscle Tissue: The Driving Force of Movement)
পেশী টিস্যু আমাদের শরীরের নড়াচড়ায় সাহায্য করে। এই টিস্যু সংকোচন এবং প্রসারিত হওয়ার মাধ্যমে কাজ করে। পেশী টিস্যুর প্রধান কাজগুলো হলো:
- চলন: হাত, পা এবং শরীরের অন্যান্য অংশের নড়াচড়া পেশী টিস্যুর মাধ্যমে হয়।
- স্থিতিশীলতা: পেশী আমাদের শরীরের ভঙ্গি ঠিক রাখে এবং ভারসাম্য বজায় রাখে।
- তাপ উৎপাদন: পেশী সংকোচনের ফলে তাপ উৎপন্ন হয়, যা আমাদের শরীরকে গরম রাখে।
- শারীরিক কার্যাবলী: হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং খাদ্য পরিপাকের মতো গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক কার্যাবলী পেশী টিস্যুর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
পেশী টিস্যুর প্রকারভেদ (Types of Muscle Tissue)
পেশী টিস্যুকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
-
কঙ্কাল পেশী বা ঐচ্ছিক পেশী (Skeletal Muscle or Voluntary Muscle): এই পেশী হাড়ের সাথে যুক্ত থাকে এবং আমাদের ইচ্ছানুসারে নড়াচড়া করতে পারে। যেমন হাত, পা এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়ানো। এদেরকে ঐচ্ছিক পেশী বলার কারণ হলো এদের নড়াচড়া আমাদের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
- বৈশিষ্ট্য: লম্বা, নলাকার এবং বহু-নিউক্লিয়াসযুক্ত (Multinucleated)। এদের মধ্যে অ্যাক্টিন (Actin) এবং মায়োসিন (Myosin) নামক প্রোটিন থাকে, যা সংকোচনে সাহায্য করে।
-
মসৃণ পেশী বা অনৈচ্ছিক পেশী (Smooth Muscle or Involuntary Muscle): এই পেশী আমাদের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, যেমন পাকস্থলী, অন্ত্র এবং রক্তনালীর প্রাচীরে দেখা যায়। এদের নড়াচড়া আমাদের ইচ্ছার বাইরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে।
- বৈশিষ্ট্য: ছোট, মাকু-আকৃতির এবং একটি নিউক্লিয়াসযুক্ত (Uninucleated)। এরা ধীরে ধীরে এবং দীর্ঘ সময় ধরে সংকুচিত হতে পারে।
-
হৃৎপেশী (Cardiac Muscle): এই পেশী শুধুমাত্র হৃদপিণ্ডে পাওয়া যায়। এটি হৃদপিণ্ডের সংকোচন এবং প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত পাম্প করতে সাহায্য করে। হৃৎপেশীর কার্যক্রম আমাদের ইচ্ছার বাইরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে।
* বৈশিষ্ট্য: শাখা-প্রশাখা যুক্ত এবং একটি নিউক্লিয়াসযুক্ত (Uninucleated)। এদের মধ্যে ইন্টারক্যালেটেড ডিস্ক (Intercalated Discs) থাকে, যা দ্রুত সংকেত প্রেরণে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডের ছন্দ বজায় রাখে।
স্নায়ু টিস্যু: তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম (Nervous Tissue: The Medium of Information Exchange)
স্নায়ু টিস্যু আমাদের শরীরের দ্রুততম যোগাযোগ ব্যবস্থা। এটি শরীরের বিভিন্ন অংশে তথ্য আদান প্রদানে সাহায্য করে। এই টিস্যুর প্রধান কাজগুলো হলো:
- সংবেদী অনুভূতি গ্রহণ: এটি পরিবেশ থেকে বিভিন্ন উদ্দীপনা, যেমন স্পর্শ, তাপ, ব্যথা ইত্যাদি গ্রহণ করে।
- তথ্য পরিবহন: এটি সংবেদী অঙ্গ থেকে মস্তিষ্কে এবং মস্তিষ্ক থেকে শরীরের অন্যান্য অংশে তথ্য পরিবহন করে।
- সমন্বয়: এটি শরীরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং সঠিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
- নিয়ন্ত্রণ: এটি শরীরের বিভিন্ন কার্যাবলী, যেমন হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হজম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
স্নায়ু টিস্যুর প্রকারভেদ (Types of Nervous Tissue)
স্নায়ু টিস্যু প্রধানত দুই ধরনের কোষ দিয়ে গঠিত:
-
নিউরন (Neuron): এটি স্নায়ু টিস্যুর কার্যকরী একক। একটি নিউরনের তিনটি অংশ থাকে:
- কোষদেহ (Cell Body): এটি নিউরনের মূল অংশ, যেখানে নিউক্লিয়াস এবং অন্যান্য অঙ্গাণু থাকে।
- ডেন্ড্রাইট (Dendrite): এটি কোষদেহের চারদিকে শাখা-প্রশাখা যুক্ত অংশ, যা অন্যান্য নিউরন থেকে সংবেদী উদ্দীপনা গ্রহণ করে।
- অ্যাক্সন (Axon): এটি লম্বা এবং সরু একটি প্রলম্বিত অংশ, যা কোষদেহ থেকে সংবেদী উদ্দীপনা অন্য নিউরনে প্রেরণ করে।
-
গ্লিয়াল কোষ (Glial Cells): এই কোষগুলো নিউরনকে সমর্থন, সুরক্ষা এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। এরা নিউরনের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কয়েক ধরনের গ্লিয়াল কোষ হলো:
- অ্যাস্ট্রোসাইট (Astrocytes)
- অলিগোডেন্ড্রোসাইট (Oligodendrocytes)
- মাইক্রোগ্লিয়া (Microglia)
- এপেন্ডিমাল কোষ (Ependymal Cells)
টিস্যু নিয়ে কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (Frequently Asked Questions about Tissues)
১. টিস্যু কিভাবে গঠিত হয়? (How are tissues formed?)
টিস্যু গঠিত হয় একই ধরনের কোষের সমষ্টি দিয়ে। যখন অনেকগুলো কোষ একত্রিত হয়ে একই কাজ করে, তখন তাকে টিস্যু বলা হয়। অনেকটা যেন অনেকগুলো ইট মিলে একটা দেয়াল তৈরি করে, তেমনই।
২. মানবদেহে কত প্রকার টিস্যু দেখা যায়? (How many types of tissues are found in the human body?)
মানবদেহে প্রধানত চার প্রকার টিস্যু দেখা যায়: আবরণী টিস্যু, যোজক টিস্যু, পেশী টিস্যু এবং স্নায়ু টিস্যু।
৩. টিস্যুর কাজ কী? (What is the function of tissue?)
টিস্যুর কাজ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ তৈরি করা এবং সেগুলোর কার্যাবলী সঠিকভাবে পরিচালনা করা। প্রতিটি টিস্যুর নিজস্ব বিশেষ কাজ আছে, যা শরীরের সামগ্রিক কার্যক্রমকে সচল রাখে।
৪. ক্যান্সার কিভাবে টিস্যুকে প্রভাবিত করে? (How does cancer affect tissues?)
ক্যান্সার হলো কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। যখন ক্যান্সার কোষ টিস্যুতে প্রবেশ করে, তখন তারা স্বাভাবিক কোষগুলোকে ধ্বংস করে এবং টিস্যুর স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে।
৫. টিস্যু পুনর্গঠন কি সম্ভব? (Is tissue regeneration possible?)
কিছু টিস্যু, যেমন ত্বক এবং লিভার, নিজেরাই পুনর্গঠন করতে পারে। কিন্তু কিছু টিস্যু, যেমন স্নায়ু টিস্যু বা হৃদপেশী, তেমনভাবে পুনর্গঠিত হতে পারে না। তবে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান টিস্যু পুনর্গঠনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
৬. টিস্যু এবং অঙ্গের মধ্যে পার্থক্য কী? (What is the difference between tissue and organ?)
টিস্যু হলো একই ধরনের কোষের সমষ্টি, যা একটি নির্দিষ্ট কাজ করে। আর অঙ্গ হলো বিভিন্ন ধরনের টিস্যু দিয়ে গঠিত, যা একটি নির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, পেশী টিস্যু একটি টিস্যু, কিন্তু হৃদপিণ্ড একটি অঙ্গ, যা পেশী টিস্যু, স্নায়ু টিস্যু এবং অন্যান্য টিস্যু দিয়ে গঠিত।
৭. টিস্যু কি রোগাক্রান্ত হতে পারে? (Can tissues become diseased?)
অবশ্যই। টিস্যু বিভিন্ন কারণে রোগাক্রান্ত হতে পারে। সংক্রমণ, প্রদাহ, আঘাত বা জিনগত ত্রুটির কারণে টিস্যুতে সমস্যা হতে পারে।
৮. টিস্যু প্রতিস্থাপন কি? (What is tissue transplantation?)
টিস্যু প্রতিস্থাপন হলো একটি অসুস্থ বা ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুর বদলে অন্য একটি সুস্থ টিস্যু স্থাপন করা। এটি সাধারণত পোড়া রোগীদের ত্বক প্রতিস্থাপনে অথবা হাড়ের জোড়া লাগানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
৯. টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং কী? (What is tissue engineering?)
টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং হলো কৃত্রিমভাবে টিস্যু তৈরি করার একটি প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতিতে কোষ, স্কাফোল্ড (Scaffold) এবং গ্রোথ ফ্যাক্টর (Growth Factor) ব্যবহার করে ল্যাবরেটরিতে টিস্যু তৈরি করা হয়, যা পরে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুর প্রতিস্থাপনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
১০. টিস্যু সংরক্ষণের পদ্ধতি কি? (What is the method of tissue preservation?)
টিস্যু সংরক্ষণের জন্য সাধারণত ক্রায়োপ্রিজারভেশন (Cryopreservation) নামক একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে টিস্যুকে খুব কম তাপমাত্রায় (-196°C) তরল নাইট্রোজেনে সংরক্ষণ করা হয়, যাতে টিস্যুর কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
টিস্যু নিয়ে কিছু মজার তথ্য (Some Fun Facts About Tissues)
- আমাদের শরীরে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল টিস্যু হলো অস্থি মজ্জা (Bone Marrow), যা রক্তকোষ তৈরি করে।
- ত্বক আমাদের শরীরের বৃহত্তম টিস্যু।
- মস্তিষ্কের স্নায়ু টিস্যু এত জটিল যে, এর প্রতিটি নিউরনের সাথে প্রায় ১০,০০০ সিনাপ্স (Synapse) তৈরি হতে পারে!
উপসংহার (Conclusion)
টিস্যু আমাদের শরীরের ভিত্তি। এই ক্ষুদ্র গঠনগুলো আমাদের জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। তাই শরীরের যত্ন নিন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন এবং সুস্থ থাকুন। টিস্যু সম্পর্কে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই, আবার দেখা হবে নতুন কোনো বিষয় নিয়ে। ধন্যবাদ!