রচনাঃ আমার চারপাশের প্রকৃতি

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “আমার চারপাশের প্রকৃতি“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

আমার চারপাশের প্রকৃতি

ভূমিকা : প্রকৃতির লীলাক্ষেত্র আমাদের এই রূপসী বাংলাদেশ। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়, জলপ্রপাত ও বনভূমি এদেশকে করে তুলেছে অপূর্ব রূপময়। আবার পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, তিস্তা, কর্ণফুলী, যমুনা প্রভৃতি নদনদী এর সমভূমি অঞ্চলকে করেছে শস্যশ্যামলা ও অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী। প্রকৃতি যে কী আশ্চর্য সুন্দর, কী নয়নাভিরাম তার রূপশোভা, কী অফুরন্ত তার লীলাবৈচিত্র্য বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ঋতুকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন না করলে তা অনুভব করা যায় না। তাই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এদেশে যুগে যুগে এসেছেন বহু বিদেশি পর্যটক, কবিরা লিখেছেন কবিতা ।

ভূপ্রকৃতি : বাংলাদেশকে প্রকৃতির সুরম্য লীলাক্ষেত্র বললে মোটেই অত্যুক্তি হয় না। এদেশের অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চিরকাল ধরে মুগ্ধ কবিচিত্তে কাব্যস্রোত বইয়ে দিয়েছে ভাবুকের হৃদয়ে অনির্বচনীয় ভাবের ঢেউ জাগিয়েছে। বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে যেকোনো দিকেই দৃষ্টিপাত করি না কেন চোখ দুটো প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে ধন্য হয়, মনপ্রাণ আনন্দে ভরে ওঠে। কী পাহাড় টিলার রমণীয় শোভা, কী গাছপালা ও তৃণগুল্ম শোভিত বনের মনোরম দৃশ্য, কী কলনাদিনী নদনদীর অপরূপ সৌন্দর্য, কী শ্যামল শোভাময় ফসলের ক্ষেত সবই এদেশে সুন্দর ও অনুপম ।

জলবায়ু : বাংলাদেশের এই যে এত সৌন্দর্য এর পেছনে কাজ করছে অনুকূল জলবায়ু। কর্কটক্রান্তি তার ওপর দিয়ে গেলেও সাগর কাছাকাছি থাকায় এবং মৌসুমি বায়ু তার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবার ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতা এখানে অতিমাত্রায় অনুভূত হয় না। জুন মাসের শুরুতে বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় এবং পূর্ব ও উত্তরের পাহাড়ি এলাকায় বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। তখন এখানে বর্ষার ছোঁয়া পেয়ে বাংলাদেশের প্রকৃতি এক অভিনব রূপ ধারণ করে। নদনদী কানায় কানায় পানিতে ভরে যায়। মাঠে মাঠে শস্য উৎপাদনের আয়োজন চলতে থাকে। হাঁসেরা দল বেঁধে আনন্দে সাঁতার কাটতে থাকে। ছোটবড় মাছেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ছোটাছুটি করতে থাকে। শাপলা, কুমুদ প্রভৃতি ফুল ফুটে অপূর্ব সৌন্দর্য ধারণ করে । গ্রীষ্মের দাবদাহ বর্ষার বর্ষণে অনেকটা কমে যায়। পাট ও আউশ ধানের খেতগুলো সবুজতায় ভরে যায় ।

Read More:  রচনাঃ সততা

ঋতুপ্রকৃতি : বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ছয়টি ঋতুতে প্রকৃতির ছয় রকম অবস্থা দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের প্রকৃতি হয়ে ওঠে এক উদাসীন সন্ন্যাসীর মতো। তার রুক্ষ রৌদ্রের দাবদাহে মানবজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এসময়ে কালবৈশাখী তার উদ্দামতা নিয়ে আসে । গ্রীষ্মের পর আসে বর্ষা। বর্ষায় এদেশের প্রকৃতিতে যেন নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয় । তখন প্রকৃতি হয়ে ওঠে সজীব ও সতেজ। ফসল ভরা খেতগুলো দেখলে মনে হয় আবহমান ধানসিঁড়ির সমুদ্র। তখন মনে হয় প্রকৃতি যেন তার সমস্ত গ্লানি মুছে ফেলে । চাঁদনি রাতের শোভা তখন বড়ই মনোলোভা মনে হয় । শরতের শেষে, শীতের আগে আসে হেমন্ত ঋতু। এ সময় সোনালি ফসলে ভরা থাকে মাঠঘাট । আর সোনালি ধানের শীষে শীষে যখন বাতাসের খেলা চলে তখন বাংলার নিসর্গে স্বর্গের ছোঁয়া লাগে। হেমন্তের পর শুষ্ক শীতল চেহারা নিয়ে আসে শীত। এসময়ে প্রকৃতি বিবর্ণ ও বিষণ্ন হয়ে পড়ে । শীতের শেষে আসে ঋতুরাজ বসন্ত । গাছপালা তখন সজীব হয়ে ওঠে। গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়, নতুন ফুল ফোটে।

বিভিন্ন দৃশ্য : বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। তার প্রত্যেকটি গ্রাম যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব রঙ্গশালা। যেদিকে চোখ যায়— অবারিত সবুজ মাঠ, ফুলেফলে ভরা গাছপালা, তৃণ গুল্মশোভিত বন-বনানী ও শ্যামল শস্যখেত এই অনুপম রূপসুধা পান করে সকলের হৃদয়ে এক অভিনব আনন্দের শিহরণ জাগে । কোথাও প্রকৃতির সবুজ ঘোমটা ভেদ করে পাকা শস্যের সোনালি সুন্দর মুখখানা বের হয়ে আসছে, আবার কোথাও বিশালদেহ বটবৃক্ষ প্রান্তরের এক স্থানে ঊর্ধ্ববাহু হয়ে মৌন তাপসের মতো দাঁড়িয়ে সুশীতল ছায়া দিয়ে পথিকের ক্লান্তি দূর করছে। কোথাও তাল গাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে আকাশ থেকে নীলিমা ছিনিয়ে আনার জন্য ওপর দিকে হাত বাড়িয়েই চলছে, আবার কোথাও দিঘির কাকচক্ষু কালো পানিতে লাল সাদা শাপলা ও কুমুদ ফুটে অপরূপ সৌন্দর্য বিস্তার করছে। বাংলাদেশের এই সৌন্দর্য বৈচিত্র্য সবার মন আনন্দে ভরে দেয় ।

Read More:  রচনাঃ আর্সেনিক সমস্যা ও তার প্রতিকার

উপসংহার : বাংলাদেশ ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ। ষড়ঋতুর খেলা চলে এদেশে। প্রত্যেক ঋতুতে এদেশ নতুন নতুন রূপ ধারণ করে । নতুন আনন্দ আর সৌন্দর্যে আমাদের মন ভরিয়ে দেয়। বাংলাদেশের মতো মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই।

সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।

Fahim Raihan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *