রচনাঃ আমার মা

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “আমার মা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

আমার মা

ভূমিকা : মায়ের মতো আপন কেউ নেই। অর্থাৎ এ ভুবনে মায়ের মতো করে সন্তানকে আর কেউ আপন করে ভালোবাসে না। যার মা নেই সে এ পৃথিবীতে নিজেকে বড়ো অসহায় বলে মনে করে। মায়ের স্নেহ, মায়া-মমতায় মানুষ এ প্রকৃতির বুকে বেড়ে ওঠে। তাই মানুষের জীবনে মায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। মা ভবিষ্যৎ জীবনের অগ্রগতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তাঁর অনুপ্রেরণাতে সন্তান সাফল্য অর্জন করে।

আমার মা : আমার মায়ের নাম বেগম মাজেদা রহমান। আমার মা আমার কাছে আদর্শ মহীয়সী নারী। বাঙালি পরিবারের মধ্যবিত্ত চালচলনে তিনি একজন দক্ষ গৃহিণী। আমাদের পরিবারের মোট ৪ সদস্যের মধ্যে তিনি মধ্যমণি হয়ে রয়েছেন। আমার মায়ের ছেলেবেলা তাঁর গ্রামের বাড়িতে অতিবাহিত হয়েছে। তবে মন-মানসিকতায় তিনি আধুনিক ও বাস্তববাদী। আর আচার-আচরণেও তার আধুনিকতা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় । আমার মা আমার কাছে প্রাণের চেয়েও প্রিয়, অতুলনীয় ও অনন্য। উন্নত চরিত্র : আমার মায়ের চরিত্র অতি উন্নত। অর্থাৎ তিনি উন্নত চরিত্রের অধিকারী হয়ে আমাদেরকে তাঁর মতো করে গড়ে ভুলতে সচেষ্ট হয়েছেন। মানুষের প্রতি তার মমত্ব অগাধ পরিমাণে লক্ষ করা যায়। তিনি সবার প্রতি তাঁর দায়িত্ব পালন করতেন। আবার আমাদেরকে আদর্শ চরিত্র গঠনে সুশিক্ষা দিতেন। তাঁর চরিত্রের মাধুর্যে সকলে মুগ্ধ হত।

আমার শৈশব স্মৃতিতে মা : ছেলেবেলায় আমার মা আমার খেলার সাথি ছিলেন। মা আমাকে আদর-স্নেহ দিয়ে লালন-পালন করেছেন। খেতে না পারলে তিনি নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন, ঘুম পাড়িয়ে দিতেন। মন খারাপ থাকলে কিংবা অভিমান ভাঙাতে মিষ্টি করে গান শোনাতেন। মায়ের এ স্মৃতিগুলো আমার মনে প্রায়ই উদয় হয়। মায়ের হাতেই আমার বর্ণপরিচয়ের হাতেখড়ি। ওঠে। তিনি আমাকে বেশ কয়েকটি ছড়া শিখিয়েছেন। কাগজ, পেন্সিল কিনে দিয়ে লেখার উৎসাহ জুগিয়েছেন। আবার রং- পেন্সিল কিনে দিয়ে ছবি আঁকার চর্চা করিয়েছেন। তাঁর নিঃস্বার্থ এ ভালোবাসা কখনো ভোলার নয়। মায়ের প্রতি আমার শৈশবের এ স্মৃতিগুলো আজও আমাকে আনন্দ দেয়।

Read More:  রচনাঃ দৈনন্দিন কাজে বিজ্ঞান

গৃহিণীরূপে মা : আমার মা সংসারের একজন দক্ষ গৃহিণী। সাংসারিক কাজে তিনি আলস্যকে এড়িয়ে চলেন। তিনি সংসারের সম কাজ নিজ হাতে সামলাতেন । সুন্দর পরিপাটি করে ঘর সাজানোর ব্যাপারে তার তুলনা করা ভার । সকালের নাশতা, টিফিন, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার সবই আমার মা তৈরি করেন । অতিথি আপ্যায়নেও আমার মা সিদ্ধহস্ত। সর্বোপরি আমার মা সুগৃহিণী হিসেবে অত্যন্ত দায়িত্বশীল।

আনন্দ দিনের মায়ের মুখ : আমাদের সংসারে কোনো আনন্দের বার্তা এলে মায়ের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আমাদের যেকোনো সফলতায় তিনি আনন্দে আত্মহারা হন। তাই আনন্দের এ দিনে তিনি বিশেষ কোনো রান্না তৈরি করে আমাদের একসঙ্গে বসিয়ে খাওয়াতে ভালোবাসতেন । আমি প্রাইমারি বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মা আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন। বস্তুত আমাদের আনন্দের মধ্যে মা নিজের আনন্দ উপভোগ করেন ।

দুঃখের সময় মা : মা যেমন আমাদের আনন্দের সঙ্গী তেমনি দুঃখেরও সঙ্গী। আমাদের অসুস্থতায় তিনি উদ্বিগ্ন হন। তিনি সারা রাত জেগে সেবা দান করার মধ্যেই সার্থকতা খুঁজে পান। তিনি আমাদের কষ্ট দূর করতে সচেষ্ট থাকেন । আমাদের ভবিষ্যৎ চিন্তায় তিনি ব্যাকুল থাকেন ।

অবসরকালে মায়ের অবস্থা : যদিও মা সংসারে তেমন অবসর পান না, তথাপি যতটুকু অবসর তিনি পেয়ে থাকেন ততটুকু সময়ে আমাদের সঙ্গে গল্প করেন। কখনো বা কাপড়ে সুই-সুতো দিয়ে ফুল তোলেন। এছাড়া পত্রিকা পড়া তাঁর অভ্যাস। তিনি সকালের অবসরে পত্রিকা পড়েন। এছাড়া তিনি বই পড়া, টিভি দেখা এবং গান শুনতে ভালোবাসেন। মা এ কাজগুলোকে অবসরে উপভোগ করেন ।

উপসংহার : ‘মা জননী নাইরে যার ত্রিভুবনে তার কেউ নাই রে’। এ কথাটি যথার্থ। কারণ সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকেই মা তার কাছে আদর্শ। আর সে মায়ের স্পর্শ যে পায় না সে অভাগা। ত্রিভুনে সবকিছু থাকলেও মায়ের অভাব তার পূরণ হয় না। ফরাসি নেতা নেপোলিয়ন বলেছেন :

Read More:  রচনাঃ শ্রমের মর্যাদা

“আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি দেব।”

আমি নেপোলিয়নের এ উক্তির সার্থকতা আমার মায়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠা হতে দেখেছি। আমার মায়ের সততা, আদর্শ, কর্তব্যপরায়ণতা ও কর্মপ্রেরণা আমাকে জীবন চলার পথে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছে। আমি আমার মাকে অসংখ্যবার সালাম জানাই এ জন্য যে, তাঁর মতো আদর্শ নারীর গর্ভে আমার জন্ম হয়েছে । আমি আমার মাকে পেয়ে আজ ধন্য হয়েছি।

সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।

Fahim Raihan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *