আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “বাংলাদেশের নকশিকাঁথা“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
বাংলাদেশের নকশিকাঁথা
ভূমিকা : একটি জাতির অতীত ঐতিহ্যসমূহ সেই জাতির গর্ব। যেকোনো জাতিই অতীতে তৈরি সৃষ্টিকর্ম নিয়ে গর্ব করে থাকে। বাংলাদেশেরও রয়েছে গৌরবময়, বর্ণময় অতীত ঐতিহ্যের ইতিহাস। বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের মধ্যে নকশিকাঁথা অন্যতম। বাংলাদেশের নকশিকাঁথার সৌন্দর্য এতটাই মনোমুগ্ধকর ছিল যে, তা দেশে ও বিদেশে সমানভাবে সমাদৃত হয়েছিল । নকশিকাঁথা কী : নকশিকাঁথা সাধারণ কাঁথার মতো নয়। এর বৈচিত্র্যময় নকশার কারণেই এটির নাম নকশিকাঁথা। নকশিকাঁথায় থাকে সূক্ষ্ম সেলাই আর রংবেরঙের নকশা। নকশার প্রতিটি ফোঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকে এক-একটি পরিবারের কাহিনি, তাদের পরিবেশ, তাদের জীবনের সুখ-দুঃখের নানান রং। সেলাইকারীর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার আখ্যান রচিত হয় নকশিকাঁথায় ।
নকশিকাঁথার সেলাই কৌশল : সাধারণত পুরনো কাপড়ের পাড় থেকে সুতো তুলে অথবা হাটে গিয়ে তাঁতিদের কাছ থেকে নীল, লাল, হলুদ প্রভৃতি সুতা কিনে এনে কাপড় সেলাই করা হয়। ঘরের মেঝেতে পা ফেলে পায়ের আঙুলের সঙ্গে সুতার এক কোনা জড়িয়ে এক-একটি গুচ্ছ সুতা পাক দেওয়া হয়। পাক দেওয়া হলে একটি আঙুলের মধ্যে আটকে দুটো পাক দেওয়া সুতা একত্র করে উল্টো পাক দেওয়া হয়। এভাবে সুতা তৈরি হলে সেগুলো হাতের কব্জিতে জড়িয়ে আবার পাকিয়ে রাখা হয়। নকশিকাঁথা সেলাইয়ের সময় এই সুতাগুলোকে ইচ্ছামতো কাজে লাগানো যায়। কাঁথা সেলাই করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজনে হয় ছেঁড়া কাপড়-চোপড়। আর দরকার হয় নানা রঙের সুতা। কাঁথা সেলাই করতে প্রথমে কতগুলো ফোঁড় শিখে নিতে হয়। এ ফোঁড়গুলো নকশায় চিত্রণের কাজ করে। বরকা ফোঁড়, তেরচা ফোঁড়, বাঁশপাতা ফোঁড়সহ আরও অনেক রকমের ফোঁড় নকশিকাঁথা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। একটি নকশিকাঁথা সেলাই করতে দীর্ঘ সময় লাগে। শোনা যায়, দাদি-নানি যে কাঁথার সেলাই শুরু করতেন, সেই কাঁথার সেলাই শেষ হতো নাত-বউয়ের হাতে। এরকম একটি কাঁথা তৈরি করতে বছরের পর বছর সময় পার হয়ে যায় ৷
নকশিকাঁথায় ফুটে ওঠা সৌন্দর্য : প্রতিটি নকশিকাঁথার সৌন্দর্য অতুলনীয় ও বৈচিত্র্যময় । গ্রামের মা-বোনেরা দুচোখে দেখা ছবির চিত্র আঁকেন নকশিকাঁথায়। বাড়ির আশপাশের গাছপালা, ফুল, পাখি, জন্তু-জানোয়ার, বাড়িঘর, হাতা, থলে, জনি, ঘড়ি, অলংকার এসবের ছবি নকশিকাথায় ফুটে ওঠে। অনেক কাঁথায় মসজিদ, মন্দিরের চিত্রও দেখা যায়। এসব ছাড়াও ভোরের সূর্য, ঢাকা, পদ্ম, অর্ধবৃত্ত ইত্যাদিও নকশিকাঁথার দেখা যায়। সৌন্দর্যের বিচারে নকশিকাঁথা লোকশিল্পের অংশ। গ্রামের সাধারণ মেয়েরা আর্ট স্কুলে ছবি আঁকা না শিখেও অসামান্য প্রতিভার সাক্ষর রাখেন নকশিকাঁথার সৌন্দর্য সৃষ্টিতে ।
বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও নকশিকাঁথা : নকশিকাঁথা বাঙালি ঐতিহ্যের এক অনন্য স্মারক। কালের বিবর্তনে আজ নকশিকাঁথা জাদুঘরের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটেছে মানুষের মন ও মানসিকতার। যান্ত্রিক জীবনে মানুষ আর নকশিকাঁথার মতো সৌন্দর্যের জিনিস তৈরি করে না। বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে থাকা নকশিকাঁথা জাদুঘরের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের নকশিকাঁথার অর্থনৈতিক গুরুত্ব : নকশিকাঁথার অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। নকশিকাঁথা তৈরি করে একটি পরিবার ভালোভাবে সংসারের খরচ চালাতে পারে। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও নকশিকাঁথা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে রক্ষা করতে পারলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে এবং অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।
উপসংহার : বাংলাদেশের নকশিকাঁথা এদেশের লোকশিল্পের অন্যতম প্রধান উপাদান। বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে থাকা এ শিল্প একসময় দারুণ জনপ্রিয় ছিল। তবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া এ নকশিকাঁথা এখন স্থান পেয়েছে বিভিন্ন জাদুঘরে। বাংলা একাডেমির সংগ্রহশালা, সোনারগাঁওয়ের লোকশিল্প জাদুঘরে নকশিকাঁথা সংরক্ষিত রয়েছে। আমাদের সবারই উচিত শিল্পগুণ সমৃদ্ধ নকশিকাঁথার হারানো ঐতিহ্য রক্ষার্থে সচেতন হওয়া। কারণ দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের নকশিকাঁথার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে ।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।