আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “বসন্তকাল“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
বসন্তকাল
ভূমিকা : শীতের রিক্ততা নতুন জীবন আগমনের ভূমিকা রচনা করে। আসে ঋতুশ্রেষ্ঠ বা ঋতুরাজ বসন্ত। বাংলাদেশের ঋতুনাট্যের শেষ কুশীলব সে। তার আগমনে মৃদুমন্দ দক্ষিণা বাতাসের যাদুস্পর্শে বর্ণবিরল পৃথিবীর সর্বাঙ্গে লাগে অপূর্ব পুলকপ্রবাহ, বনবীথির রিক্ত শাখায় জাগে কচি কিশলয়ের অফুরন্ত উল্লাস। বাতাসের মৃদু মর্মর ধ্বনি এবং দূর বনান্তরাল থেকে ভেসে আসা কোকিলের কুহুগীতি পৃথিবীতে সৃষ্টি করে এক অপরূপ মায়া নিকেতন। অশোক পলাশের রঙিন বিহ্বলতায় ও শিমুল কৃষ্ণচূড়ার বিপুল উল্লাসে, মধুমালতী ও মাধবী মঞ্জুরীর উচ্ছল গন্ধমদির প্রগলভতায় সারা আকাশতলে গন্ধ, বর্ণ ও গানের তুমুল কোলাহলে লেগে যায় এক আশ্চর্য মাতামাতি । এভাবে বাঙালির সঙ্গে ফুল ফোটানো ও ফুল ঝরানোর খেলা সাঙ্গ করে চলে যায় ঋতুরাজ বসন্ত ।
বসন্তের বৈশিষ্ট্য : বাংলাদেশের ষড়ঋতুর সর্বশেষ ঋতু বসন্ত। শীতের রথের ঘূর্ণিধূলির আড়াল দিয়ে নবীন সূর্যের আলোয় স্নাত হয়ে সে আসে। শীতের ত্যাগের সাধনা তো বসন্তের নবজন্মের প্রতীক্ষায়ই। বসন্ত আসে নবীন প্রাণ, নবীন উৎসাহ, নবীন উদ্দীপনা নিয়ে, যৌবনের সঞ্জীবনী রসে পরিপূর্ণ হয়ে। তার সুখপ্রদ স্পর্শে গাছে গাছে জেগে ওঠে কচি কিশলয়। পাখির কলকাকলিতে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে। কোকিলের মধুর সুর মন কেড়ে নেয়। বসন্তের বানী নতুনকে বরণ করার, পুরাতনকে বর্জন করার, ফাল্গুন ও চৈত্র-এ দুটি মাস অতি মধুর রূপে সেই বাণীকে বসন্তের বীণায় ঝংকৃত করে তোলে। বসন্তকালে গাছে গাছে নানা রঙের ফুল ফোটে। ফুলে ফুলে ভরে যায় প্রকৃতি। সৌরভে আসে অলি, ভ্রমরের গুঞ্জনে মুখরিত কুঞ্জবন। প্রকৃতির রূপের নেশায় মানুষ মাতাল হয়ে ওঠে । তাই বসন্তকে ঋতুরাজ বলা হয়ে থাকে।
বসন্তের স্থায়িত্ব : ফাল্গুন চৈত্র এই দুই মাস বসন্তকাল। তখন গ্রীষ্মের উত্তাপও যেমন থাকে না, শীতের ঝাকুনিও তেমন অনুভূত হয় না। বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে মনোরম ও আরামদায়ক সময়। কবিরা তাই যুগে যুগে বসন্ত ঋতুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন । তবে বসন্তের স্থায়িত্বকাল খুবই অল্প। ফাল্গুন চৈত্র মাসকে তার স্থায়িত্বকাল ধরা হলেও ফাল্গুনের মাঝামাঝি গ্রীষ্মকাল হাজির হয়ে যায় এবং বসন্তকে প্রায় গ্রাস করে ফেলে । তাই আমরা তখন থেকেই ঘাম মুছতে মুছতে ও পাখার বাতাস নিতে নিতে প্রাণান্ত হয়ে পাড় ।
বসন্তের বর্ণনা : বসন্ত সত্যি ঋতুরাজ। তার যাদুময়ী স্পর্শে গাছপালা, তৃণলতা নতুন পাতায় পাতায় সুশোভিত হয়ে ওঠে। আকাশে বাতাসে, গোলাপে কিংশুকে আনন্দের শিহরণ বয়ে যায়। পৃথিবীতে যেন স্বর্গের সৌন্দর্য নেমে আসে। মানুষের মনে আনন্দ ধরে না শীতকালে কনকনে শীত সহ্য করতে না পেরে যে মধুকণ্ঠ কোকিল লুকিয়ে থাকে তারা আবার ফিরে আসে বসন্তের সময়। পাতার আড়াল থেকে শোনা যায় তাদের সুমধুর গান । বসন্তকালে আম, জাম, লিচু প্রভৃতি গাছ মুকুলিত হয়। মুকুলের গন্ধে মৌমাছি ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসে। এদের গুঞ্জনে চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে। প্রজাপতি তার রঙিন ডানা মেলে উড়তে থাকে। তখন মৃদুমন্দ দক্ষিণা বাতাস বয়ে যায়। সকলের অঙ্গে বুলিয়ে দেয় শান্তির পরশ। রাজার মতোই বসন্তের প্রাচুর্য। রাজার মতোই প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ। তখন প্রকৃতির সারা অঙ্গে যৌবনের ঢেউ খেলে যায় এবং মাটির পৃথিবী নতুন আনন্দে হাসতে থাকে। দিনে সূর্যের উজ্জ্বল আলো এবং রাতে চাঁদের স্নিগ্ধ কিরণ পৃথিবীর বুক থেকে শীতের কালিমা দূর করে দেয়। তখন বনে বনে ফোটে শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, অশোক, পলাশ প্রভৃতি ফুল । তাদের উজ্জ্বল লাল রং সকলের হৃদয় রাজ্যে রঙের পরশ বুলিয়ে দেয় ।
বসন্তের সৌন্দর্য : শীতে প্রকৃতি রিক্ত হয় । শীত যেন বসন্তের পটভূমিকাই তৈরি করে। নবপত্র সম্ভারে, বর্ণগন্ধময় পুষ্পের সমারোহে, পূর্ণ চাঁদের মায়ায় আসে ঋতুরাজ বসন্ত । শীত ও গ্রীষ্মের এই সন্ধিকালটি পরম রমণীয়। ফাল্গুনের আগমনে নবপল্লবে সুশোভিত হয় গাছপালা, বিচিত্র বর্ণ ও গন্ধের পুষ্পে সুশোভিত হয়ে ওঠে পৃথিবী। গন্ধ ও বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয় কোকিলের কুহুধ্বনি এবং অন্যান্য সুরেলা গায়কী পাখির কণ্ঠ। এ যেন প্রকৃতির নবযৌবনের প্রতিমূর্তি। তাই কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কণ্ঠে বসন্তের সৌন্দর্য বর্ণনা শুনি এভাবে—
ফুটিল বকুল ফুল কেন লো গোকুলে আজি
কহ না সজনি ?
আইল কি ঋতুরাজ? ধরিলা কি ফুলসাজ
বিলাসে ধরণী?
বসন্তের প্রভাব : বসন্তের শীত ও গ্রীষ্মের বিপরীতমুখী প্রচণ্ডতা এক জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ায়। তখন থাকে না শীতের হাড়ভাঙা কাঁপুনি আর গ্রীষ্মের মাথা ফাটা উত্তাপ। তাই তখন মনে আসে নতুন উদ্যম আর দেহে আসে নতুন শক্তি এবং সামর্থ। সকলেই শীতের জড়তা কাটিয়ে সতেজ প্রাণ, নতুন উদ্দীপনা নিয়ে কাজে লেগে যায়। কিন্তু এ মধুর ঋতুতেও মানুষ নানা রকম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয় । কলেরা, বসন্ত প্রভৃতি মারাত্মক ব্যাধি আনন্দের মাঝে নিরানন্দের ছায়াপাত করে ।
বসন্তের উপকারিতা : শীত ও গ্রীষ্মের মাঝখানে অবস্থিত বসন্তকাল মানুষের পক্ষে খুবই আরামপ্রদ। প্রাণের আরামের সঙ্গে দেহের আরামের অবকাশও এই ঋতুতে তৈরি হয়। নানাবিধ রবি শস্য এবং নানাবিধ রসালো ফলের উপহার দেয় বসন্ত। আর থাকে মলয় বায়ু, ফুলের সৌরভ ও কোকিলের কুহুতানে মন জুড়ানো আনন্দ ।
উপসংহার : শীতের ত্যাগের সাধনা বসন্তে সার্থক হয়ে ওঠে। প্রকৃতির সারা অঙ্গে নতুন প্রাণ, নতুন উৎসাহ ও নতুন উদ্দীপনার ঢেউ খেলে যায়। কবির ভাষায় বসন্ত হয়েছে তাই ‘ঋতুরাজ। বসন্ত মানুষের প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ ও আত্মার শান্তি। বসন্ত যে সুন্দর, আর সুন্দর মুখের জয়ই তো সর্বত্র। বসন্ত যৌবনের ঋতু, সুন্দরের ঋতু, আনন্দের ঋতু । তাই সে ঋতুরাজ।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।