আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “পরিবেশ দূষণ“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
পরিবেশ দূষণ
ভূমিকা : প্রাণের বিকাশের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। এ সম্পর্ক যখন সহজ এবং স্বাভাবিক থাকে, তখন এর গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের কোনো সচেতনতা আসে না। প্রকৃতি ও মানুষের সৃষ্ট এবং জাগতিক পরিবেশের অভিপ্রেত সাম্যাবস্থা বজায় থাকলে চিন্তার কোনো কারণ থাকে না। কিন্তু যখন সেই সাম্যাবস্থায় ফাটল ধরে, তখন আর নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকলে চলে না। জীবনকে উন্নত করার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান যখন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করল, অমনি পরিবেশ আর আগের মতো রইল না। দূষিত হতে শুরু করল পরিবেশ। আজ এই পরিবেশ দূষণে সমগ্র জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। নির্বিচারে প্রকৃতি সংহার এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন আবহাওয়া দূষিতকরণের মধ্যদিয়ে মানুষ পৃথিবীতে ডেকে এনেছে ক্ষয় ও অবক্ষয়ের মহামারি। বাংলাদেশেও একই অবস্থা বিরাজমান ।
পরিবেশ দূষণের স্বরূপ : পরিবেশ আমাদের কাছে জীবনদাত্রীর মতো। পরিবেশ থেকে আমরা জীবনধারণের নানা উপকরণ সংগ্রহ করি। যে অক্সিজেনের অভাবে আমাদের প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা, তা এই পরিবেশই আমাদের সরবরাহ করে। যে খাদ্যগ্রহণ করে আমরা বেঁচে থাকি, তা এই পরিবেশেরই দান। কিন্তু মানবজীবনের বিপুল চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে আমরা যখন বন কেটে বসত তৈরি করি, কারখানা গড়ি, সড়ক বানাই, রেল লাইন পাতি, অমনি পরিবেশ বদলে যায়, প্রকৃতির সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হতে থাকে। আমাদের জীবনযাত্রায় আজ একদিকে বিজ্ঞানের বিজয় গৌরব, অন্যদিকে দূষণের দুঃস্বপ্ন। পরিবেশ দূষিত হয় প্রধানত বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ ও পারমাণবিক দূষণের মাধ্যমে। জনসংখ্যা বৃদ্ধিও পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে কম ভূমিকা রাখে না। মোটকথা, পরিবেশ দূষণের জন্য একটি দুটি কারণ নয়, অগণিত কারণ বিদ্যমান।
বায়ু দূষণ : প্রাচীনকালে যখন আগুন আবিষ্কৃত হয়, তখন থেকেই প্রাণের ধাত্রী অক্সিজেনের ধ্বংসলীলা সূচিত হয় । আগুন বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের অনুপাত হ্রাস করে জীবনের অনুকূল পরিবেশের ভারসাম্যই শুধু নষ্ট করে নি, ধোঁয়া এবং ভস্মকণায় তাকে করে তুললো কলুষিত। অরণ্য কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে প্রাণ প্রদায়ী অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু মানুষ নগর জনপদ গড়ে তোলার প্রয়োজনে নির্বর্ণীকরণের জন্য কঠোর হাতে গ্রহণ করে নিষ্ঠুর কুঠার। ফলে, অক্সিজেন পরিশোধনের রূপকার অরণ্যকে সংকুচিত করে মানুষ প্রকারান্তরে নিজেই নিজের অস্তিত্ব বিলোপের চক্রান্তে শামিল হলো ।
যানবাহনও বায়ু তথা পরিবেশকে নানাভাবে দূষিত করে। গাড়ি যখন চলে তখন অক্সিজেনের সঙ্গে কার্বনের দহনে শক্তি উৎপন্ন হয়। দহনকার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না হলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের সঙ্গে আরও কতকগুলো গ্যাস নির্গত হয়ে থাকে। নির্গত গ্যাসগুলোর মধ্যে বিষাক্ত কার্বন-মনো-অক্সাইড গ্যাসও থাকে। কলকারখানার ক্ষেত্রে যে দূষিত পদার্থ কালো চুল্লী দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে বাতাসকে বিষাক্ত করে তোলে, তার পরিণতির কথা ভাবলে যেকোনো সুস্থ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ওঠবেন।
বায়ুদূষণ প্রসঙ্গে আর একটি দিকের কথা উল্লেখ করতে হয়। তা হলো ধোঁয়াশা। শীতকালে ঠাণ্ডা হাওয়ায় বাতাসের জলীয়বাষ্পের ঘনীভূত রূপ বাতাসের ধূলিকণা ও কার্বনের কণাকে অবলম্বন করে ধোঁয়াশার সৃষ্টি করে। যে বাতাসে আমরা শ্বাস গ্রহণ করি, সেই বাতাসই যদি দূষিত হয়ে পড়ে, স্বাভাবিকভাবেই তা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হয়। আজ বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মাথাধরা, শ্বাসরোগ, হাঁপানি, ফুসফুসে ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ যে ক্রমবর্ধমান, তার মূল কারণ বায়ু দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি । গ্রামের মানুষও আজ বায়ু দূষণ থেকে মুক্ত নয় ।
পানি দূষণ : শিল্প উৎপাদনে নিয়োজিত বিভিন্ন ধরনের কারখানায় নানারকম রাসায়নিক ও বর্জ্য বস্তু নিয়মিতভাবে নদীগর্ভে নিক্ষিপ্ত হয়। শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীগর্ভে নিক্ষিপ্ত বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ নদীর পানিকে কতটা দূষিত করে, সঠিক বিচারে তা বলা শক্ত। তার উপরে গৃহস্থের উচ্ছিষ্ট এবং পৌর কর্পোরেশনের আবর্জনা সেই দূষণক্রিয়াকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। লঞ্চ, জাহাজ থেকে নির্গত তেলও পানি দূষণের একটি অন্যতম কারণ। শুধু নদীর পানি নয়, গ্রামের পুকুর, খাল-বিলের পানিও নানা কারণে দূষিত হয়। পানি দূষণ আধুনিক সভ্যতার এক অভিশাপ। গ্রামে নদীর পানিতে, পুকুরে প্রচুর আবর্জনা ফেলা হয়, পাট পচানো হয় ফলে পানি দূষিত হয় । শব্দ দূষণ : বায়ু দূষণ ও পানি দূষণের সাথে সাথে শব্দ দূষণের কথাও উল্লেখ করতে হয়। শহরে শব্দ দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। রাস্তায় বাস, ট্রাক, ট্যাক্সির হর্ন, কলকারখানার আওয়াজ, বোমাবাজি, মাইকের চিৎকার, মিছিলের ধ্বনি প্রতিধ্বনি এসবই স্বাভাবিক পরিবেশকে নষ্ট করে আমাদের পারিপার্শ্বিক শান্তিকে বিঘ্নিত করছে। দীর্ঘকাল এ ধরনের দূষিত শব্দের পরিমণ্ডলে থাকলে আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয়ের অবনতি ঘটে, মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হয়, স্নায়ুরোগের লক্ষণ দেখা দেয়। বর্তমান সময়ে গ্রামেও মাইকের উৎপাত খুব বেড়েছে।
পারমাণবিক বোমা ও পরিবেশ দূষণ : বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছে পারমাণবিক যুগ। কাঠ, কয়লা এবং তেল দহনের ফলে বায়ুমণ্ডল যে পরিমাণে দূষিত হয়, পারমাণবিক দহনে দূষণের পরিমাণ তারচেয়ে কয়েক লাখ গুণ বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম বর্ষে পারমাণবিক বোমাবর্ষণের ফলে শুধু জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকিই ধ্বংস হয় নি, তার প্রবল প্রতিক্রিয়ায় সন্নিহিত ভূখণ্ডের মানুষ, জীবজন্তু এবং উদ্ভিদের সুস্থ অস্তিত্বও বিপন্ন হয়ে পড়ে। পরীক্ষামূলকভাবে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলে বায়ুমণ্ডলকে যে পরিমাণে বিষাক্ত করে তোলা হয়, বায়ুমণ্ডলকে সেই পরিমাণে বিষমুক্ত করে তার পরিশোধনের বিন্দুমাত্র প্রয়াস নেই । তাছাড়া, প্রচণ্ড শক্তিশালী রকেটের সাহায্যে মহাকাশ অভিযানেও উপগ্রহ উৎক্ষেপণে যে পরিমাণ বিষাক্ত গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে নিক্ষেপ করা হয়, তাতেও আবহাওয়া দূষিত করে চলেছে পৃথিবীর বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো ।
মৃত্তিকা দূষণ : অধিক ফসল ফলানোর জন্য এবং কীট-পতঙ্গের হাত থেকে ফসলকে রক্ষার জন্য কৃষকেরা অপরিকল্পিতভাবে জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে। এতে মৃত্তিকা দূষণের সাথে সাথে জীবজগতে বিপন্ন অবস্থা দেখা দিয়েছে।
প্রতিকারের উপায় : পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের জন্য জনবসতি ও সভ্যতার সম্প্রসারণের প্রয়োজনে নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস বন্ধ করতে হবে। অরণ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব না হলেও, যেখানে সুযোগ আছে, সেখানেই গাছ লাগানো প্রয়োজন । যানবাহন থেকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থযুক্ত কালো ধোঁয়া যাতে বন্ধ করা যায়, তার জন্য পুরোনো ইঞ্জিনচালিত গাড়ির চলাচল নিষিদ্ধ হওয়া দরকার । এ বিষয়ে সরকারি সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। শহর বা জনবসতির কাছাকাছি কলকারখানা না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তার চুল্লীগুলোর মুখও থাকা উচিত ভূমি থেকে অনেক ওপরে। কলকারখানা থেকে দূষিত পদার্থ নির্বিচারে নদীতে না ফেলাই সমীচীন কিংবা এগুলো ফেলার আগে প্রয়োজনমতো শোধন করে নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে রকেট নিক্ষেপণ ও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ নিষিদ্ধ হওয়া চাই। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণও কঠিন কাজ নয়। ইলেকট্রিক বা হাইড্রোলিক হর্ন, মাইকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করলেই সে উদ্দেশ্য অনেকাংশে সিদ্ধ হয় । ককটেল, বোমা ও গ্র্যান্ডে বিস্ফোরণের শব্দ ও ধোঁয়া একইসাথে শব্দদূষণ ও বায়ু দূষণ করে । অবিলম্বে আইন করে এগুলো তৈরি, বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ করা জরুরি। অপরিকল্পিতভাবে জমিতে যে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, সে সম্পর্কে অশিক্ষিত কৃষকদের সচেতন করতে হবে। অতিরিক্ত কয়লা ব্যবহার হ্রাস করে বায়ুমণ্ডলের দূষণ প্রতিরোধ অবিলম্বে সূচিত হওয়া দরকার । তাহলেই পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা যাবে ।
উপসংহার : একদিকে আধুনিক জীবনযাত্রার প্রয়োজন, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ রোধ উভয় দিকে লক্ষ রেখে চলা সহজ কথা নয় ৷ তবু মানবজাতি সচেতন হলে এবং সমাজব্যবস্থা সহায়তা করলে, পরিবেশ দূষণের অবসান ঘটানো না গেলেও তাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, এমন আশা করা অসংগত নয় । আজ আর পরিবেশ দূষণ নয়, চাই তার বিশুদ্ধকরণ ।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।