রচনাঃ শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার

আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।

শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার

ভূমিকা : শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে শিক্ষার মানও উন্নত হয়েছে। প্রযুক্তিগত শিক্ষায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। নতুন নতুন আবিষ্কার পৃথিবীকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে। জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য বিধানকল্পে মানুষ একদা বিজ্ঞানচর্চা শুরু করেছিল। বিজ্ঞানের হাত ধরে মানুষ সেদিন পেয়েছিল জীবনের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি, পেয়েছিল জীবনের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের আশ্বাস। মানুষ সেদিন বিজ্ঞানকে জীবনযাত্রার সহচর করে জীবনকে করে তুলেছিল স্বাভাবিক। আধুনিক বিজ্ঞানের উচ্চ প্রযুক্তি সম্বলিত যে আবিষ্কারটি পৃথিবীতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে একুশ শতককে সবচেয়ে গতিশীল করে দিয়েছে, উন্মোচন করেছে অনন্ত সম্ভাবনার দ্বার, বিস্ময়কর সে আবিষ্কারটি হলো ‘কম্পিউটার’। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আশীর্বাদস্বরূপ কাজ করছে কম্পিউটার। আজকের দিনে মানুষ হয়ে পড়েছে কম্পিউটারনির্ভর। বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারের অবদান অনস্বীকার্য ।

কম্পিউটার : কম্পিউটার বলতে এমন একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রকে বোঝায় যা অগণিত উপাত্ত গ্রহণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারে। ‘কম্পিউটার’ শব্দটি ইংরেজি এবং এর অর্থ হলো গণকযন্ত্র । কম্পিউটার হিসাবের যন্ত্র হিসেবে যোগ- বিয়োগ, গুণভাগ জাতীয় অঙ্ক কষতে পারে। এছাড়া তথ্যের বিশ্লেষণ ও তুলনা করা এবং সিদ্ধান্ত দেওয়ার বিস্ময়কর ক্ষমতা রয়েছে এ যন্ত্রটির। গণিত, যুক্তি, সিদ্ধান্তমূলক কাজের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ। কাজের গতি, বিশুদ্ধতা ও নির্ভরশীলতার দিক থেকে কম্পিউটারের ক্ষমতা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত ।

আবিষ্কার ও বিবর্তন : কম্পিউটারের প্রাথমিক ধারণা আসে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ পরিকল্পিত একটি গণকযন্ত্র থেকে। নির্ভুল ও দ্রুত গণনার প্রয়োজনীয়তা চার্লস ব্যাবেজকে এই পরিকল্পনায় প্রেরণা যুগিয়েছিল। ব্যাবেজের এই পরিকল্পনা রূপায়িত হতে সময় লেগেছিল প্রায় এক শতাব্দী, কারণ তাঁর ভাবনার সঙ্গে সমসাময়িক প্রযুক্তিবিদ্যা তখন তাল মেলাতে পারে নি। ব্যাবেজের আগে ও পরে যে ধরনের গণকযন্ত্র প্রচলিত ছিল, সেগুলো স্বয়ংক্রিয় নয়— একবার একটির বেশি গণনা কিংবা দু-এর বেশি সংখ্যা একসাথে ব্যবহার করা যেত না। যোগ-বিয়োগ করতে সক্ষম গণকযন্ত্র প্রথম তৈরি করেন গণিতবিদ ক্লেইলি পাসকেল ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে। ১৬৭১ খ্রিস্টাব্দে গডফ্রাইড লেবনিজ প্রথম গুণ ও ভাগের ক্ষমতাসম্পন্ন যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর তৈরি করেন । আধুনিক ক্যালকুলেটরের মূলনীতি ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে চার্লস ব্যাবেজ প্রথম পরিকল্পনা করেন। ১৯৪৪ সালে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় ও আই. বি. এম. কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে ইলেকট্রোমেকানিক্যাল কম্পিউটার তৈরি হয়। এরপর ইলেকট্রিক মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কারের সাথে সাথে কম্পিউটারের গঠন ও প্রকৃতির বৈপ্লবিক বিবর্তন সাধিত হয়। এর প্রয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়েছে বহুলাংশে। ইলেকট্রনিকস্ শিল্পের দ্রুত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কম্পিউটার হয়েছে সহজলভ্য। এখন বিজ্ঞানীর গবেষণাগার ছেড়ে সামাজিক জীবনে তার প্রতিষ্ঠা। ১৯৫৭ সালের পর আরও ব্যাপক হারে কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমদিকে নির্মিত পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এনিয়াক’ নামক কম্পিউটারের ওজন ছিল ত্রিশ টন এবং এর আয়তন ছিল বিশাল। ৪০ ফুট লম্বা ও ২০ ফুট প্রস্থ ঘরের সবগুলো দেয়ালজুড়ে এর যন্ত্রপাতি ছিল। বর্তমানে কম্পিউটার একটি দেয়াল ঘড়ির বা একটি ডায়েরির সমান আকারে নেমে এসেছে।

Read More:  ভাবসম্প্রসারণঃ জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে চিরস্থির কবে নীর হয় রে জীবন নদে?

কম্পিউটারের ব্যবহার : আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে জগতের তাবৎ কাজে এখন কম্পিউটারের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তর। স্বাভাবিক বর্ণনায় বা অতি অল্প কথায় এর বর্ণনা বা বিবরণ দেওয়া সম্ভবপর হবে না। মানুষের চলা-বলা, ব্যবসায় বাণিজ্য, যাবতীয় কাজকর্ম, চিকিৎসা, গবেষণা, এমনকি রাস্তাঘাট নির্মাণ ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণেও এখন কম্পিউটারের ব্যবহার অপ্রতিহত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্রীয় জীবনের বহুবিধ কাজই এখন কম্পিউটার ছাড়া অচল। কম্পিউটার এখন শুধু মানুষের কার্যাবলিকে সহজ ও দ্রুতগতিই দান করে নি, নতুন নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে । চিকিৎসাক্ষেত্রে কম্পিউটার তো এখন ডাক্তার বনে যাচ্ছে। রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে রোগের মাত্রা এবং কোন রোগে কী ওষুধ তারও ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছে কম্পিউটার । মানুষের দৈনন্দিন যোগাযোগের ক্ষেত্রেও কম্পিউটার দূরের মানুষকে কাছের মানুষে পরিণত করেছে। ই-মেইল, ফোন ফ্যাক্স, ইন্টারনেট প্রভৃতি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মূলেই রয়েছে কম্পিউটার। আদমশুমারি থেকে শুরু করে দেশের জন্মনিয়ন্ত্রণ, বাজেট প্রণয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনা, শিল্পকারখানা নির্মাণের যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রেও অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখছে। আজকের দিনে মানুষ চাদে যাচ্ছে, এ অভাবিত সাফল্যের মূলেও কাজ করেছে কম্পিউটার । সংক্ষেপে ও সহজ ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, কম্পিউটার মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে এত বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে যে, মানুষ এখন আর কম্পিউটারকে জীবনের প্রতিদিনকার একটি অংশ বলে মেনে নিতে দ্বিধা করছে না ।

শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার : কম্পিউটার এখন শিক্ষাক্ষেত্রে একক বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল এক অনন্য শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। উন্নত বিশ্ব অবশ্য এ ব্যাপারে আমাদের চেয়ে অনেকদূর এগিয়ে। অতি স্বল্প সময়ে এর দ্বারা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে উপস্থাপন পারছে তথা জ্ঞানজগতের বিভিন্ন শাখায় অবাধে বিচরণ করছে অপ্রতিহত গতিতে। মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য সব বইয়ের মূল্যবান তথ্যগুলো ডিস্কে জমা রেখে, প্রয়োজনে কম্পিউটারের একটি ক্লিকের সাহায্যে তা এখন মানুষের সামনে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। কম্পিউটার এখন শিক্ষাক্ষেত্রে আশীর্বাদ হয়ে উপস্থিত হয়েছে। মানুষের জ্ঞানের পিপাসা নিবৃত্ত করছে। কম্পিউটারের ব্যাপারে বলতে গেলে বিশ্ববিখ্যাত কোনো গ্রন্থাগারের ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষাজগতে কম্পিউটার একদিকে যেমন ভূমিকা পালন করছে, তেমনই অন্যদিকে মুদ্রণ প্রযুক্তিকে অগ্রসর করে দিচ্ছে। পুস্তক প্রকাশনার বেলায় কম্পিউটার দ্রুত এর খোলনলচে পাল্টে এক বিপুল চম্ভাবনাময় জগতে নিয়ে এসেছে। জ্ঞান বিস্তারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তথা মুদ্রণ প্রযুক্তি মানবকুলকে নিয়ে যাচ্ছে এক চরম ৩তিশীলতার জগতে। অতি দ্রুত বই প্রকাশে কম্পিউটারের ভূমিকা এখন অনস্বীকার্য।

Read More:  রচনাঃ ধান

শিক্ষার মান উন্নয়নে কম্পিউটার : শিক্ষার মানোন্নয়নে কম্পিউটারের ভূমিকা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বের গতানুগতিক এক্ষাপদ্ধতির বদলে এখন বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়েছে কম্পিউটারের বদৌলতে। শিক্ষার্থীরা পূর্বে যে বিষয়টি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অধ্যয়ন করত, বর্তমানে কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্যবহারিক জ্ঞান প্রয়োগের ফলে সে বিষয়টির অতি অল্প সময়ে আয়ত্ত করা  সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন শাখা যেমন— চিকিৎসা, প্রকৌশল, রসায়ন, পদার্থ, গণিত, দর্শন ইত্যাদির মানোন্নয়নে কম্পিউটার বিশিষ্ট ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশের শিক্ষায় কম্পিউটার ব্যবহার : বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার সর্বস্তরে কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হলেও বাংলাদেশে এখনো সম্ভব হয়নি। আমাদের দেশে শুধু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেই কম্পিউটার ব্যবহার হচ্ছে। প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে কম্পিউটারের ব্যবহার নেই বললেই চলে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ও কারিকুলাম বোর্ড’-এর সিলেবাসে কম্পিউটার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও তা একেবারেই প্রাথমিক ধারণা বিষয়ে সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তা-ও আবার যোগ্য শিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে শিক্ষা লাভ করতে পারছে না। তার পরেও এটি যে একটি মহৎ উদ্যোগ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার : বিশ শতকের আশির দশকে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে কম্পিউটার এলেও, আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কম্পিউটার শিক্ষা শুরু হয় নব্বই-এর দশকে। বর্তমানে বাংলাদেশে কম্পিউটার শিক্ষার দ্রুত এবং ব্যাপক বিকাশ ঘটছে। কিন্তু কম্পিউটার শিক্ষা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় শিক্ষার্থীর পরিমাণ এখনো খুবই সীমিত। বাংলাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কম্পিউটার ইনস্টিটিউট থেকে কম্পিউটার শিক্ষা দেওয়া হয়। এখান থেকে যারা শিক্ষা লাভ করেছে তাদের অনেকেই আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে সিলেটে অবস্থিত শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপকভাবে কম্পিউটার শিক্ষা শুরু হয়েছে। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের দেশের মেধাবী ছাত্রগুলো শিক্ষাকর্ম শেষ করে আরও উন্নত শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়ে আর ফিরে আসছে না। এর ফলে আমাদের দেশের কম্পিউটার শিক্ষার ওপর যথেষ্ট ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।

Read More:  রচনাঃ আমার মা

উপসংহার : মানবজীবনের সব ক্ষেত্রে যেখানে কম্পিউটারের ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী, সেখানে শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কম্পিউটারের অবদানে জ্ঞান বিজ্ঞানের যেমন বিকাশ ঘটছে, তেমনই গতিশীলতা এসেছে জীবনের কর্মপ্রবাহে। কম্পিউটার প্রায় প্রত্যেক শিক্ষিত মানুষের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। তাই কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা। ও এর ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করে জাতিকে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক ।

সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।

Fahim Raihan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *