আজকের পোস্টে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা শেয়ার করব “আর্সেনিক সমস্যা ও তার প্রতিকার“। এই রচনাটি আশা করি তোমাদের পরীক্ষায় কমন আসবে। আমরা এই রচনাটি যত সম্ভব সহজ রাখার চেষ্টা করেছি – তোমাদের পড়তে সুবিধা হবে। চলো শুরু করা যাক।
আর্সেনিক সমস্যা ও তার প্রতিকার
ভূমিকা : সুখদুঃখ, আনন্দবেদনা, রোগব্যাধির মাঝেই মানুষের জীবন। রোগব্যাধি কিছু কিছু সৃষ্টি হয় মানুষের অস্বাভাবিক জীবন- যাপন ও নিত্যনতুন কলাকৌশলের আবিষ্কারের প্রেক্ষিতে এবং প্রকৃতির খেয়ালে। মানুষ জীবন আর জীবিকার সাথে সাথে রোগব্যাধি থেকেও দূরে থাকতে চায়। অথচ প্রকৃতির অপ্রতিরোধ্য হস্তক্ষেপ থেকে মানুষের নিস্তার নেই। এক সময় গুটিবসন্ত মানবজীবনে হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতির ফলে তা নির্মূল হয়েছে। এ ভয়াবহ রোগ নির্মূল হতে না হতেই আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগের ভয়াবহতায় শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত সব শ্রেণির মানুষ উদ্বিগ্ন ।
আর্সেনিক কী এবং এর উৎস : আর্সেনিক এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ যা পানিতে দ্রবণীয়। এটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। পদার্থটি স্বাদ ও গন্ধহীন। এর বর্ণ ধূসর, রূপালি বা রাংতা সাদা। এটি একটি দানাদার পদার্থবিশেষ; যা বায়ুর সংস্পর্শে আসলে কালো রং ধারণ করে । এ বিষাক্ত পদার্থটি মাটি, বায়ু ও পানিতে বিভিন্ন রূপে অবস্থান করে। আর্সেনিক যখন পানিতে দ্রবীভূত হয়ে মানবদেহে প্রবেশ করে তখন তাকে আর্সেনিক দূষণ বলা হয় । রাসায়নিকভাবে আর্সেনিক সর্বদাই কোনো না কোনো বস্তুর সঙ্গে যৌথভাবে অবস্থান করে ।
আর্সেনিকের সন্ধান : ১৯৯৩ সালে এদেশে সর্বপ্রথম আর্সেনিকের বিষক্রিয়ার ঘটনা ধরা পড়ে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর উত্তরের সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় আর্সেনিক দূষণ শনাক্ত করে। কিন্তু তথ্যটি প্রকাশ করা হয়নি। ঈশ্বরদীতে আর্সেনিকের প্রথম সন্ধান মেলে গত ১২ জুলাই, ১৯৯৬। ইতোমধ্যে রাজশাহীতে ১ নভেম্বর, ১৯৯৬ কয়েক দফায় প্রায় ২৮টি নলকূপের মধ্যে ১৪টিতে এবং ৫৩টির মধ্যে ৩২টিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মোটামুটিভাবে বিশেষজ্ঞরা একমত যে, গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ বা গঙ্গা অববাহিকার পললে ভূগঠন প্রক্রিয়ায় ‘আর্সোনোপাইরাইট’ শিলাস্তর জমা হয়েছিল লাখ লাখ বছর আগে এবং সেচ কাজে অত্যধিক ভূগর্ভের পানি ব্যবহারের দরুন ঐ শিলাস্তর ক্ষয় হয়ে পানিতে আর্সেনিক মিশেছে ।
আর্সেনিক ও বাংলাদেশে এর প্রভাব : দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪১টি জেলার পানিতেই মানুষের শরীরে সহনশীল মাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ আর্সেনিক বিদ্যমান। দেশের পাঁচ কোটি লোক বর্তমানে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে। ফলে দুই কোটি মানুষ নানা ধরনের ভয়াবহ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। দেশের সর্বাধিক আর্সেনিক দূষণযুক্ত জেলা হচ্ছে বরিশাল, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, যশোর, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, গোপালগঞ্জ, মাদারিপুর, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালি, নারায়ণগঞ্জ, পিরোজপুর, সুনামগঞ্জ, খুলনা, রাজশাহী, পাবনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, নওগাঁ ও দিনাজপুর। D.C.H ও S.O.E.S যৌথভাবে ১৯৯৭ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকার নলকূপের পানি পরীক্ষা করে। এ সময় তারা ৬০টি জেলার ৯ হাজার ৮৯টি টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করে। এ পরীক্ষায় শতকরা ৮৫ ভাগ টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক পাওয়া যায় ।
আর্সেনিক প্রতিক্রিয়া : আর্সেনিক বিষক্রিয়া ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষতি করে। আর্সেনিক বিষক্রিয়ার পর রোগের পূর্ণ লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৭-৮ বছর সময় লাগে। রোগের প্রাথমিক লক্ষণে চামড়ার রং কালো হয়। চামড়া শক্ত ও খসখসে হয়। শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। বারবার বমি ও ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে রোগীদের হাত-পায়ের তালুতে আর্সেনিকের গুটি দেখা দেয়, যা যন্ত্রণা করে। তাছাড়া শরীরের চামড়া ফেটে যায়, পেট ব্যথা, কাশি ও চোখের মণি সাদা হয়ে অনর্গল চোখ দিয়ে পানি ঝরে। গুপ্তাঙ্গে ক্ষত দেখা দেয় এবং পরবর্তী সময়ে তা ক্যান্সারে রূপ নেয় ।
বিশেষজ্ঞের অভিমত : বিশেষজ্ঞদের মতে পৃথিবীর ভূত্বকের মাটিতে আর্সেনিক থাকা স্বাভাবিক। অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে আর্সেনিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ, অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের কারণে ভূগর্ভের আর্সেনিক পানিতে দ্রবীভূত হয়ে যাচ্ছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ ধারণা করছেন আর্সেনিক সমস্যাটি প্রাকৃতিক ।
আর্সেনিক সমস্যা মোকাবেলায় পদক্ষেপ : আর্সেনিক সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো দূষণমুক্ত পানি সরবরাহ করা। সম্প্রতি আর্সেনিকের ভয়াবহতা প্রকাশিত হওয়ায় সরকার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আর্সেনিক মোটিগেশন ওয়াটার সাপ্লাই নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লিউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে। প্রকল্পটিতে তিন বছর ধরে জরিপ কাজ পরিচালিত হবে।সম্প্রতি পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য এক ধরনের ফিল্টার ট্যাবলেট তৈরি হয়েছে। এটি বেশ ফলপ্রসূ। ২০ লিটার পানিতে ৫০০ গ্রাম ফিটকিরি মিশিয়েও পানিকে আর্সেনিকমুক্ত করা যায়। এছাড়া পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি সম্পর্কে সরকারি পর্যায়ে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি ও তার প্রতিষেধক ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধন করতে হবে।ভূগর্ভস্থ পানি ও মাটি পরীক্ষা করে নিরাপদ স্থানে নলকূপ বসানো যেতে পারে।আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের পানি পান করা বন্ধ করতে হবে।আর্সেনিকযুক্ত পানি ওষুধ বা ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করতে হবে।জেলা পর্যায়ে পানি পরীক্ষা ও শোধনাগার স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ব্যক্তিগত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আর্সেনিক প্রতিরোধে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। .
উপসংহার : বর্তমানে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যার মতো আর্সেনিকও একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অথচ গত এক দশক ধরে সরকার ভয়াবহ এ সমস্যা সম্পর্কে নীরব ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিশেষজ্ঞগণ এবং বিভিন্ন এনজিও ও বিদেশী সংস্থা এ ব্যাপারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে । যদিও সমস্যার ভয়াবহতার তুলনায় তাদের কার্যক্রম খুবই অপ্রতুল।
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি আমাদের এই পোস্ট থেকে রচনা যেটি তুমি চাচ্ছিলে সেটি পেয়ে গিয়েছ। যদি তুমি আমাদেরকে কোন কিছু জানতে চাও বা এই রচনা নিয়ে যদি তোমার কোনো মতামত থাকে, তাহলে সেটি আমাদের কমেন্টে জানাতে পারো। আজকের পোস্টে এই পর্যন্তই, তুমি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের বাকি পোস্ট গুলো দেখতে পারো।